বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; ড. মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আরিফী লিখিত বই ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে বই এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
মেয়েটির নাম সারা। এলাকার আর দশটা মেয়ের চেয়ে খুব বেশি আলাদা নয় সে। সুন্দর মুখশ্রী। মধ্যম গড়ন। বুদ্ধিদীপ্ত চলন। শৈশব থেকেই ওর চিন্তা-চেতনা ছিল একটু ভিন্ন প্রকৃতির। সারা’র মাও চাইতেন তার মেয়ে হবে সবার থেকে ব্যতিক্রম। মেয়েকে অনেক ভালোবাসতেন তিনি। তাই তাকে নিয়ে চিন্তার অন্ত ছিলো না তার।
কানয দ্বীপ ও পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশের সামাজিক জীবন ব্যবস্থার মাঝে খুব একটা তফাত ছিল না। পথে বেরুলেই চারিদিকে উঁচু মিনারের সুদৃশ্য মসজিদ আর নূরানী চেহারার মুসলমান চোখে পড়ত; যা পথের শোভা বহুগুনে বাড়িয়ে দিতো। পুরুষদের মন আত্মমর্যাদা ও পৌরুষত্বের মহিমায় ভরপুর ছিল। রাস্তায় কিংবা বাসে কোনো নারীর সাথে অশালীন আচরণ করার মতো দুঃসাহস ছিল না কারোই। নারীরাও নিজেদেরকে লজ্জার আবরণে সদা আবৃত রাখত।
অধিকাংশ নারী শরঈ পর্দা পালনে ব্রতী ছিল। আর এভাবেই তারা নিজেদেরকে পুরুষের কামুক দৃষ্টি ও উপহাসমূলক বাক্যবান থেকে নিরাপদ রাখত। দ্বীপটিতে একজন প্রসিদ্ধ আলেম ছিলেন। ছোট বড় সবাই তাকে সশ্রদ্ধ মুহাব্বত করত। বাদশাহ, আমির-উমারা, মন্ত্রী-আমলা, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ সবার পছন্দনীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। জনসাধারণের কাছে তার বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা ছিল ঈর্ষণীয়। তিনি যা বলতেন নির্দ্বিধায় সবাই তা মেনে নিতো। বাস্তবিকই তিনি ছিলেন একজন অতি মর্যাদাবান আল্লাহভীরু আলেম। মহান প্রভূর সান্নিধ্য অর্জনের নিমগ্নতায় কেটে যেত তার রাত-দিন।
কানয দ্বীপের টেলিভিশনগুলোতেও উন্মত্ত নৃত্ত-গীতির পসরা ছিল না। ছিল না কোনো নারীর উপস্থিতি। কানয দ্বীপে জীবন ছিল বড় সুন্দর ও শান্তিময়। মানুষেরা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদে জড়াত না। আলেম সাহেব কোনো বিষয়ে ফতোয়া দিলে লোকেরা তা অকপটে মেনে নিতো। জুমার দিন খতিব সাহেব প্রদত্ত খুতবা ও আল্লাহর পথে আহবানকারীর সুমিষ্ট বাণী তারা মনোযোগ সহকারে শুনত এবং আমলে পরিণত করত। দ্বীপের লোকদের ওপর বিজাতীয় সংস্কৃতি তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
তবে মাঝে মাঝে বিজাতীয় কৃষ্টির পক্ষে কিছু ক্ষীণ আওয়াজ শোনা যেত। যাদের মুখ থেকে এ আওয়াজ বেরুতো, তারা বিজাতীয়দের জীবনধারায় আসক্ত ও শত্রু পক্ষের চক্রান্তের শিকার ছিল। বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের কতিপয় কর্মচারীও নির্লজ্জতার প্রসার ও অশ্লীল চ্যানেল সমূহের মাধ্যমে পাপের বীজ বপনে তৎপর ছিল। তথাপি তাদের প্রচেষ্টা সমাজে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
এরপর বহুবছর কেটে গেছে। প্রচার মাধ্যমও পৌঁছেছে উন্নতির শিখরে। কানয দ্বীপের বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে গেছে ডিশ তথা স্যাটেলাইট কানেকশন। আর স্যাটেলাইট কানেকশনের হাত ধরে এখানে বেদ্বীন-কাফেরদের সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটতে লাগল। দ্বীপের অধিবাসীরা এখন টিভির পর্দায় এমন মানুষদের দেখতে লাগল যাদের জীবনধারা ছিল পশুসুলভ। বরং তাদের যাপিত জীবন ছিল আরো নিম্নতর। খানা-পিনা, ভোগ-বিলাস ও আনন্দ-ফুর্তি ছাড়া যাদের কাছে জীবনের অন্য কোনো অর্থ ছিল না। ছিল না নামাজ-রোজা কিংবা আত্মিক পবিত্রতা বা দৈহিক পরিচ্ছন্নতার কোন বালাই।
কানয দ্বীপের মুসলিম নারীগণ টেলিভিশনের পর্দায় উলঙ্গ-বেহায়া নারীদের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখতে লাগল। দ্বীপের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম মহোদয় চিৎকার করে বলতে লাগলেন- ‘আল্লাহকে ভয় করো। বিজাতিদের অনুসরণ থেকে বাঁচো। নিজ দীনের ওপর অবিচল থাকো’।
তিনি নারীদের প্রতি বিশেষভাবে আহবান জানালেন- ‘তোমরা হিজাব খুলো না। পর্দা ছেড়ো না। তোমরা হলে মূল্যবান রত্ন। যে কেউ তোমাদেরকে দেখার বৈধতা নেই। তোমরা সতী-সাধ্ববী। তোমরা আমাদের মা, আমদের বোন, আমাদের কন্যা। আমাদের ইজ্জত তোমরা’।
তিনি তাদের হাতে পায়ে ধরে ধ্বংসের গহব্বর থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে চাইলেন। দ্বীপের অন্যান্য আলেমগণও রেডিও, টিভিসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সহয়তায়, জুমআর খুতবার আলোচনায়, লেখালেখির সক্রিয়তায় নানাভাবে এর কুফল তুলে ধরছিলেন। তারা ভয় পাচ্ছিলেন যে, নদীর উত্তাল তরঙ্গে ভাসমান নৌকাতে ফুটো হয়ে গেলে তা নিমজ্জন সুনিশ্চিত। লোকেরা আলেমদেরকে ভালোবাসতো বলে তাদের কথা মানতে লাগল।
কয়েক বছর পরের কথা। সর্বজন শ্রদ্ধেয় সেই আলেম ব্যক্তিটি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন! তার সমকালিন বাকী আলেমগণও একে একে সবাই প্রভূর সান্নিধ্য গ্রহণ করেছেন! জীবিতরা পূর্বসূরীদের মহান দায়িত্ব পালন করতে লাগলেন! তারা সেই নৌকাটিকে নিমজ্জনের হাত থেকে বাঁচাতে সচেষ্ট রইলেন।
এদিকে শত্রুপক্ষও বসে নেই! তারা লোকদেরকে ডেকে ডেকে বলছে- হে দ্বীপবাসী! আমাদের দিকে তাকাও! দেখো কতো আনন্দময় আমাদের জীবন। যুবকের বাহুতে যুবতী নারী! যখন যেখানে খুশি দু’জন দুজনার সান্নিধ্য গ্রহণে কোনো বাঁধা নেই! দেখো, মেয়েরা সমুদ্র তটের মুক্ত বাতাসে বিকিনি পরে জীবনের স্বাদ নিচ্ছে।
নারী-স্বাধীনতার স্বাদ নিতে আকাশের বিশালতায় ছুটে চলা উড়োজাহাজে যাত্রীদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত থাকছে! হোটেল-রিসিপশনে নিজেদের চপলা-চঞ্চলা অঙ্গভঙ্গিতে গ্রাহকদেরকে বিমুগ্ধতায় ডুবিয়ে রাখছে।
কিন্তু কানয দ্বীপের নারীকূল মনোলোভা এ আহবানে সাড়া দিলো না! কারণ, ‘কাঁধের গোস্ত কোথা থেকে কেটে খেতে হয়’ (অর্থাৎ এ কাজ কিভাবে আঞ্জাম দিতে হয়) নির্বুদ্ধিতা বশত শত্রুপক্ষের তা জানা ছিল না।
সেসব পুণ্যাত্মা নারীগণ যারা আশৈশব শরঈ পর্দার পূর্ণ পাবন্দি করে আসছে, তারা হঠাৎ অনাবৃত মুখে পর পুরুষের সামনে যাওয়া কিংবা এক ঝটকায় নিজেদের হিজাব খুলে ফেলাকে কিভাবে মেনে নেবে? ফলে শত্রুপক্ষের কুবাসনা পূরণে এসব পূণ্যাত্মা নারীগণ কিছুতেই প্রস্তুত ছিল না।