বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; ডা. শামসুল আরেফীন লিখিত বই কুররাতু আইয়ুন যে জীবন জুড়ায় নয়ন এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
ভূমিকাটুকুও বইয়ের অংশ। এটুকু খুব মন দিয়ে পড়ার বিষয় আছে। না হলে পুরো বইটিকেই ‘বিদআত’ ‘শিরকী’ বলেও বসতে পারেন। এই বই থেকে তারাই উপকৃত হতে পারবেন, যাদের এই ভূমিকা বোঝা হয়ে গেছে। পাঠকদের মধ্যে বিভিন্ন মানহাজের ভাইবোনেরা আছেন। আসলে আমরা কেউই কিন্তু আদর্শিক প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত নই। ভালোলাগার দিক থেকে কেউ তাবলীগী, তাসাউউফপন্থী, সালাফী, রেজভী, জামায়াতে ইসলামপন্থী — কোনো না কোনো আদর্শঘেঁষা আমরা সবাই। সবার আদর্শের দালিলিক অংশটুকুর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শুরু করছি।
বইয়ের প্রায় প্রতিটি অধ্যায়েই তাবলীগের কথা আছে। আমার আজকের যতটুকুই ইলম, ভাবনা আর সমন্বয় — এগুলোর বুনিয়াদ ‘দাওয়াত ও তাবলীগ’-এর প্রচলিত মেহনতই। এটা আমাকেও স্বীকার করেই লিখতে হবে, আর আমার বন্ধুদেরও এটা স্বীকার করেই পড়তে হবে। এই লেখা শুধুমাত্র যারা ইসলাম অনুযায়ী পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে জীবনকে সাজাতে চান, তাদের জন্য। এখানে ইসলাম মানে একটু বোঝার ব্যাপার আছে।
ইসলাম মানে হলো—কুরআন এবং কুরআনের ব্যাখ্যা, যা নবীজী করেছেন (হাদীস); হাদীসের ব্যাখ্যা, যা সাহাবীরা করেছেন (আছার); আছারের ব্যাখ্যা, যা তাবেঈরা করেছেন, পূর্ববর্তী উলামাগণ (সালাফ) যার উপর ঐকমত্য পোষণ করেছেন। ইসলামকে বাঁকিয়ে পেঁচিয়ে নিজেদের মনমতো সংজ্ঞায়ন করে সাজিয়ে নিলে সেটা ইসলাম নয়। আল্লাহও যেন খুশি থাকে, আবার শয়তানও যেন নারাজ না হয়—এ ধরনের ইসলামের সাথে নিঃসম্পর্ক ঘোষণা করছি। মনের মতো ব্যাখ্যা যাদের পছন্দ, তারা এই বই পড়ে দ্বিমত করা ছাড়া বেশি উপকার পাবেন না।
এখানে সব কিছুই সুন্নাহসাব্যস্ত, তা কিন্তু নয়। কিছু আছে দলিলসাব্যস্ত, কিছু আছে আলেমগণের নিরীক্ষিত কওল, কিছু আছে কমন সেন্স ও আদব। যদি খটকা লাগে ফিকহীভাবে আস্থাভাজন আলেমের তাহকীক ও পরামর্শ নেবেন। কিতাব যথেষ্ট না, কিতাবের সাথে রিজাল (ব্যক্তি) যুক্ত হলেই ইলম পূর্ণতা পায়। তাই এখানে যা-ই থাকুক, খটকা লাগলে নিজ পছন্দের মানহাজের আলেম থেকে যাচাই করে অনুমোদিত হলে আমল করবেন। ফিকহী বা দীনী যেটুকু শিখেছি পেয়েছি, আপনাদের খেদমতে আরজ করলাম। কারও উপকারে এলে আল্লাহ বান্দাকে সাদাকায়ে জারিয়ার বদলা দেবেন—এই আশায় লিখে দিলাম। অভিজ্ঞতালব্ধ ও দীনী ও আদবগত জিনিসগুলোকে মেডিকেল সাইন্সে গুলিয়ে আপনাদের জন্য শরবত বানালাম। বিস্বাদ লাগলে উলামা হযরতগণ তো আছেনই আমাদের সংশোধনে —আলহামদুলিল্লাহ।
অনেকে আমার লেখা পড়ে মনে করতে পারেন, এই ব্যাটা খালি নিজের ঢোল পিটায়—আমি এই করেছি, আমার অমুক এই করে। আসলে ব্যাপারটা হলো, আমি আমার সাথে ঘটা প্রতিটা ঘটনা নিয়ে ভাবি। তা থেকে আমি নিজে যে শিক্ষা নিই, তা-ই লিখি, কারও যদি কাজে আসে, এজন্য। এজন্য আমার অমুক, আমার তমুকের কথা চলে আসে। ওই সিনারিওটা বলে শিক্ষাটা উপস্থাপন করি, যাতে আপনাদের চোখের সামনে একটা চিত্রকল্প ভেসে ওঠে।
ফলে আপনারাও অনুভব করতে পারেন শিক্ষাটা আমারই মতো করে। অনেকে বিরক্ত হন, ইনিয়েবিনিয়ে এত কথা না লিখে আসল কথাটুকু লিখলেই তো হয়, বাপু। আসলে আমি আপনাদের কোনো শিক্ষা দিতে চাই না, সে যোগ্যতাও আমার নেই, আমি শুধু ভাবাতে চাই, অনুভব করাতে চাই। কোনো নীতিকথা শেখানোর জন্য লিখি না, বিষয়গুলো আমি যেভাবে ফিল করি, আপনাদেরকেও করাতে চাই, তাই ইনিয়েবিনিয়ে এত কথা লিখতে হয়।
তাই শুরুতে তাবলীগের কথা শুনে একটু বিরক্তি এলেও বিরক্তি ওভারকাম করে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ। রত্ন পেতে সমুদ্র সেঁচতে হয়, জমিন খুঁড়তে হয়। শুভকামনা আপনাদের সবার জন্য। আল্লাহ আমাদের এই টুটাফাটা বাহানাগুলোকে কবুল করে নয়ন-জুড়ানো জীবন দুনিয়াতেও দান করুন, আখেরাতেও দান করুন। আমীন।