বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আব্দুল কাইয়ুম আহমেদ লিখিত বই ইলুমিনাতি এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির যুগে নিজেকে একজন যোগ্য ও অগ্রসর ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলা অপরিহার্য। বিজ্ঞান যেমন আলোর গতিতে এগোচ্ছে, তেমনি প্রতিনিয়ত আমাদের দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে বিশাল একেক প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। শুধু ইতিবাচক নয়, নেতিবাচকও। অথচ আমরা অভুক্তের মতো সামনে যা আসে বাছ-বিচার ছাড়াই তা গোগ্রাসে গিলতে থাকি। যুগান্তরে বয়ে আসা এই মানসিকতা আজ গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জীবন আর আঞ্চলিক পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটা এখন বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে রূপ ধারণ করেছে। আমরা খালি চোখে দেখছি—আমেরিকা- ইংল্যান্ড-রাশিয়া-ফ্রান্স-জার্মান-চিনের নেতৃত্বে জাতিসংঘের মতো প্রমোদতরীতে চড়ে বিশ্ব শান্তি-ভ্রাতৃত্ব-মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত শিখরে আরোহণ করতে যাচ্ছে। সৌম্য-শান্ত চেহারা নিয়ে বয়ে চলা এই স্রোতের আরও একটা রূপ আছে—কালো রূপ। যা অতলস্রোতার মতো খুব নীরবে বয়ে চলে। কুৎসিত, বীভৎস আর ভয়ংকর তার চেহারা। প্যাসিফিকের ওশানের সেই রেখায় সাদা আর কালো পানির স্রোত যেমন কখনো মিশে যায় না, অথচ একইসাথে বয়ে চলে। কত কাছাকাছি, পাশাপাশি। তেমনি সমাজে বয়ে চলা এই কুৎসিত স্রোতের অস্তিত্বও আমরা খালি চোখে অনুভব করতে পারি না।
পাঠক, এতক্ষণে হয়তো ঘোরলাগা এক কৌতূহলের ভেতর আছেন আপনি, হয়তো সমাজের কালো অংশে বয়ে চলা সেই স্রোতের ব্যাপারে জানার প্রবল আগ্রহ জন্মেছে আপনার। ভাবছেন, কী সেই রহস্যগাঁথা – সেই কৃষ্ণগহ্বর! হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন। সমাজের সেই কুৎসিত, বীভৎস, ভয়ংকর স্রোতই হলো ইলুমিনাতি। হাজার বছর ধরে অন্তরালে কলকাঠি নাড়া যে ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠী, তারই আপডেটেড ভার্সন এই ইলুমিনাতি। স্রোত নিয়ন্ত্রণের যে পরিকল্পনা ইলুমিনাতির ছিল—তা অনেকাংশেই ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রযুক্তি, যুদ্ধাস্ত্র, অর্থনীতি, রাজনীতি, খাদ্য—সবই এখন তাদের হাতে। এখন শুধু জাল গুটিয়ে আনার অপেক্ষা, আমরা অপেক্ষায় আছি ডাঙায় তোলা মাছের মতো খাবি খেতে খেতে মারা যাবার।
ড্যান ব্রাউনের মতো কিছু মানুষ এ বিষয়ে নতুন করে আলোকপাত না করলে হয়তো আমাদের জানাই হতো না ইলুমিনাতি সম্পর্কে। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ইলুমিনাতি একটি পরিচিত শব্দ হলেও মুসলিম, বিশেষত বাঙালিরা এ শব্দটির সাথে খুব একটা পরিচিত নয়।
অনেকদিন পর্যন্ত বাঙালি মুসলিমসমাজ ইলুমিনাতি-প্রশ্নে নিস্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। তবে আশার কথা হলো, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ইলুমিনাতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেশ লক্ষ্যণীয়। স্যোস্যাল মিডিয়ায় মাঝেমধ্যেই এ ব্যাপারে লেখা চোখে পড়ে। বাংলাভাষায় ইলুমিনাতি সম্পর্কে বিশেষ কোনো বই না থাকলেও আশার কথা হলো, আমার জানামতে, কেউ কেউ ইতোমধ্যে ‘ইলুমিনাতি’ নিয়ে পড়াশোনা করছেন। আর বাংলাভাষায় ইলুমিনাতি সম্পর্কে গল্পভাষ্য ও তত্ত্বের সমন্বয়ে লেখা এটিই প্রথম বই।
ইলুমিনাতি যেহেতু একটা গুপ্ত সংগঠন, তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয় অতি সংগোপনে, কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে, তাই এ-সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ একটি বই লিখতে যে পরিমাণ ধ্রুব তথ্যের দরকার—একজনের পক্ষে তা যোগাড় করা মুশকিল কাজ। তাই বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে বইটি রচনার সময় বেশকিছু জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগ, ইউটিউবসহ ড্যান ব্রাউনের দ্যা ভিঞ্চি কোড, এঞ্জেল এন্ড ডেমনস্ ছাড়াও বিদেশি কিছু ব্লগের সাহায্য নিয়েছি। সবার কাছে আলাদাভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ প্রায় অসম্ভব ব্যাপার, তাই এখানে আমি সম্মিলিতভাবে কৃতজ্ঞতায় তাদের স্মরণ করলাম।
বইটি রচনার সময় আমার সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছি; এরপরও যে অপূর্ণতাটুকু ছিল, শ্রদ্ধেয় সম্পাদক তা পূরণ করেছেন বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি। শ্রদ্ধেয় সম্পাদক সাদিক ফারহান, যাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে না চিনলেও এই উপলক্ষ্যে তার প্রতি বিশাল এক ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেল। বইয়ের জন্য তিনি যে শ্রম দিয়েছেন, তা আমাকে সত্যিই বিস্মিত করেছে। যে অবস্থায় আমি বইয়ের প্রাথমিক পাণ্ডুলিপি জমা দিয়েছিলাম, তার সম্পাদনা-সংযোজনের পর পাণ্ডুলিপির কলেবর প্রায় দেড় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মহান আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করেন। আমিন।
একটা বই লেখা থেকে শুরু করে বাজারে আনা পর্যন্ত অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়। শুরু থেকে আজ অব্দি যারা আন্তরিক সহযোগিতা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি রইল আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। বিজ্ঞ পাঠকমহলের প্রতি আমার অনুরোধ, যেহেতু মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তাই বইয়ে তথ্যগত কোনো অসংগতি বা রচনাগত দুর্বলতা পরিলক্ষিত হলে আমাদেরকে অবহিত করবেন। পরবর্তী সংস্করণে শুধরে নেওয়া হবে। বইটির উন্নয়নকল্পে পাঠকের যেকোনো সুপরামর্শ সাদরে গৃহীত হবে।
এছাড়াও আমি পাঠকদের আশ্বস্ত করছি, বইয়ের উন্নয়নকল্পে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। পরবর্তী সংস্করণে বইটি আরও নিখুঁত, নির্ভুল ও তথ্যসমৃদ্ধ হবে ইন শা আল্লাহ। বইটি যাদের জন্য লেখা হলো, সেই পাঠকমহল যদি এর দ্বারা ইলুমিনাতির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সম্পর্কে কিছুমাত্র সচেতন হন, নিজের অস্তিত্ব, ঈমান, আমল রক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে থাকেন তাহলেই আমি আমার শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো। আল্লাহ আমাদের সকলের ঈমান ও আমল রক্ষা করেন, আমিন।