Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

হযরত মুয়াবিয়া রাঃ জীবনচরিত pdf

হযরত মুয়াবিয়া রাঃ জীবনচরিত pdf Description

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; নাসীম আরাফাত লিখিত বই হযরত মুয়াবিয়া রাঃ জীবনচরিত এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।

কংকর ময় একটি পথ। মদিনার পথ। পথের পাশে মাঝে মাঝে কাঁটাগুল্মের ছড়াছড়ি। দু একটি খেজুর গাছও অতন্দ্র প্রহরীর মত শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এ পথে চলাফেরা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও মদিনার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। দূর দেশ থেকে আগমন-প্রত্যাগমন করে বাণিজ্য কাফেলা।

এক দিনের ঘটনা। এ পথ ধরেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথাও যাচ্ছিলেন। সাথে সওয়ারীর পিছনে তুলে নিলেন এক সাহাবীকে। একেবারে যুবক সাহাবী। বয়স পঁচিশ বা ছাব্বিশ হবে। চোখের তারায় তার বুদ্ধিমত্তার দীপ্তি। ঠোঁটের কোণে তাঁর তৃপ্তির হাসি। সারাক্ষণ তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে পড়ে থাকেন। কোথাও গেলে প্রয়োজন সেরেই আবার তাঁর সাহচর্যে ছুটে আসেন। রাসূলকে ছাড়া কোথাও থাকতে পারেন না।

রাসূল ও সেই সাহাবীকে নিয়ে সওয়ারিটি হেলেদুলে যাচ্ছে। সওয়ারির চোখে মুখেও যেন আজ আনন্দের ঝিলিক। খুশির আমেজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সেই সাহাবীকে বহন করে তার জীবন ধন্য। তার জীবন সার্থক। তাই প্রাণ প্রাচুর্যে আজ তার হৃদয় ভরপুর। আনন্দের আমেজে আজ তার হৃদয় টইটম্বুর। সওয়ারিটি কিছু দূর যাওয়ার পর রাসূলের চেহারায় নির্মল আলোকমালা ছড়িয়ে পড়লো। পেছনে বসা সাহাবীকে বললেন- আচ্ছা বল তো, তোমার শরীরের কোন অঙ্গ আমার শরীরের সাথে লেগে আছে?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এমন বিস্ময়কর প্রশ্ন শুনে সেই সাহাবী বিস্মিত। অবাক। ভাব-তন্ময়তায় আত্মহারা। এমন প্রশ্ন তো রাসূল কখনো করেন নি। আজকে হঠাৎ রাসূলের মুখে এমন প্রশ্ন? কেন এ প্রশ্ন? কী তার উদ্দেশ্য? এ ধরনের প্রশ্নের ভিড় তাঁর চোখের তারায়। অবশেষে বিনীত কণ্ঠে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পেট ও বুক আপনার পবিত্র দেহের সাথে লেগে আছে। নির্জন মরুর বুকে নিরবতা নেমে এল। আর কোন কথা নেই। ক্ষণকাল এভাবেই কেটে গেল। তারপর রাসূলের ওষ্ঠাধর তিরতির করে কেঁপে উঠলো। শিশির স্নিগ্ধ গোলাপ কলি যেমন মৃদু বায়ুর পরশে কেঁপে উঠে। বললেন, হে আল্লাহ! তাকে ইলম দ্বারা পরিপূর্ণ ও টইটম্বুর করে দাও।

সিয়ারু আলামিন নুবালা ৪/২৬৭

আরেক দিনের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করবেন। তাই এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলেন। অদূরে কোথাও পানি আছে কি না তা খুঁজছিলেন। সেই সাহাবী রাসূলের ইতিউতি ভাব দেখে বুঝে ফেললেন, তিনি ওযু করার ইচ্ছে করেছেন। ব্যস, আর দেরি নয়। দৌড়ে গিয়ে রাসূলের জন্য ওযুর পানি আনলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বুদ্ধিমত্তায় বিমোহিত হলেন। ক্ষণকাল অপলক নেত্রে তাঁর মুখাবয়বের দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর ওযু করলেন। বললেন- ‘শোন, তুমি যদি কখনো শাসক হও, তাহলে আল্লাহকে ভয় করে চলবে। ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে।

সেই সাহাবী বলেন, রাসূলের বিগলিত হৃদয়ের এই আবেগময় কথা শুনে আমার বিশ্বাস হল, নিশ্চয়ই আমি এ পরীক্ষার মুখোমুখি হব। একদিন না একদিন অবশ্যই আমি শাসক হব।

আল ইসাবা : ৪১৩, তারিখুল খুলাফা : ১৫৯, সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৪/২৬৪

এ ধরনের আরও অনেক দুআ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সাহাবীর জন্য করেছিলেন। কারণ, রাসূল তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। খুব মায়া করতেন। অতিশয় আদর করতেন ও ভালোবাসতেন। পাঠক বন্ধুরা! নিশ্চয়ই সেই সাহাবীর নাম জানতে তোমাদের অন্তর আকুলি-বিকুলি করছে। তাকে চিনতে হৃদয় আকুপাকু করছে। কে সেই সাহাবী? কি তার নাম? কি তার পরিচয়?

হ্যাঁ…, তিনি এক বিস্ময়কর প্রতিভা। এক চিরন্তন ঐতিহ্য। এক অমর ব্যক্তিত্ব। তিনি হলেন হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান রা.।

সে অনেক আগের ঘটনা। হযরত মুয়াবিয়া রা.-এর জন্মের অনেক আগের ঘটনা। কুরাইশের এক সুশ্রী সুপুরুষ যুবক ফাকা ইবনে রবীয়া। তার সাথে কুরাইশের অনন্যা সুন্দরী, বুদ্ধিমতি হিন্দের বিয়ে হল। এরা উভয়ে মক্কার উঁচু পরিবারের সন্তান। ফাকা ও হিন্দের দাম্পত্য-জীবন আনন্দঘন পরিবেশে কেটে যাচ্ছে। সময়ের তালে তালে তরতর করে এগিয়ে চলছে। কিন্তু হঠাৎ একদিনের ঘটনা। এক ভুল বুঝাবুঝি তাদের সুখকে দুঃখে রূপান্তরিত করলো। তাদের মধুময় সময়গুলোকে বিষময় করে তুললো। শুধু তাই নয়, চিরদিনের জন্য উভয়ের মাঝে বিচ্ছেদের তিক্ত রেখা টেনে দিল।

ফাকার বিশাল বাড়ি। বাড়ির বৈঠকখানায় মানুষের অবাধ যাতায়াত। কারো জন্য কোন বাধা নেই। কোন নিষেধ নেই। সবাই স্বাচ্ছন্দে যাতায়াত করে। গল্প-গুজব করে। আনন্দ-স্ফূর্তি করে। তারপর চলে যায়। একদিন হিন্দ ও ফাকা সেখানে বসে কথাবার্তা বলছিল। অন্য কেউ সেখানে ছিল না। সহসা এক প্রয়োজনে ফাকা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো আর হিন্দ সেখানেই অন্যমনষ্ক হয়ে স্বামীর আগমনের প্রত্যাশায় বসে রইল। ইতোমধ্যে এক ব্যক্তি এসে সেই কামরায় প্রবেশ করলো। যেই দেখল একজন মহিলা বসে আছে, আর দেরি করলো না। সাথে সাথে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।

দূর থেকে ফাকা দেখল, হিন্দ যে কামরায় বসে আছে সে কামরা থেকে এক লোক বেরিয়ে গেছে। ব্যস, ফাকার মনে সন্দেহের দানা মুকুলিত হল। ক্রমেই তা পল্লবিত হয়ে উঠল। এগিয়ে এলো হিন্দের নিকট। লাথি মেরে রাশভারী কণ্ঠে বললো, এ কামরা থেকে কে বেরিয়ে গেলো?… তার সাথে তোমার কী সম্পর্ক?

ফাকার কথায়, কণ্ঠে ও আচরণে চমকে উঠল হিন্দ। আত্মস্থ হয়ে চরম বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বললো, কই… কেউ তো এখানে আসেনি… তবে মনে হচ্ছে, কেউ যেন এদিকে এসেই চলে গেছে।

ব্যস, ছোট্ট এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয়ের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হলো। ক্রমেই তা ফুলে ফেঁপে এক অসহনীয় রূপ ধারণ করলো। ফাকা হিন্দকে তার পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দিল। কিন্তু এতেই শেষ হল না। এক মুখ, দু’মুখ করে মক্কার সর্বত্র এ ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়লো। সবাই তা নিয়ে কানাঘুষা করে। হাস্যরসিকতা করে।

হিন্দের পিতা উৎবা। মক্কার এক সম্মানী ব্যক্তিত্ব। মক্কায় তার যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তি। মেয়েকে নিয়ে কানাঘুষা সে সহ্য করতে পারলো না। একদিন হিন্দকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, মেয়ে আমার! মক্কায় লোকেরা তোকে নিয়ে কানাঘুষা করে। হাসাহাসি করে। আসলে ঘটনা কী? যদি ঘটনাটি সত্য হয় আমাকে বল। গোপনে তাকে হত্যা করে ফেলি। সব আলোচনাই থিতিয়ে যাবে। আর যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে চল, ইয়েমেনের কোন ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট যাই। কোন জ্যোতিষীর নিকট যাই। সে তোর সত্যবাদিতার কথা ঘোষণা করে দিলেই সবাই তা মেনে নিবে হিন্দের আত্মমর্যাদা আকাশ ছুঁইছুঁই।

পিতার কথায় দারুণ আঘাত পেল! হৃদয়ে বেদনার রক্তক্ষরণ শুরু হল! অত্যন্ত দৃঢ় কণ্ঠে কসম খেয়ে নিজের পবিত্রতা ও সূচিতার কথা ব্যক্ত করলো! ফলে উৎবার বিশ্বাস হল, তার মেয়ে নিষ্পাপ! তার মেয়ে নিষ্কলংক ও নির্দোষ! এরপর উৎবা জামাতা ফাকার নিকট গিয়ে বললো, তুমি আমার মেয়ে সম্পর্কে অনেক অপবাদ দিচ্ছ! তাই ইয়েমেনের কোন ভবিষ্যদ্বক্তার নিকট চল! কে অপরাধী আর কে নিষ্পাপ, তা তিনি বলে দিবেন! তারপর আমরা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারবো।

মক্কার গলি-গুপচি অতিক্রম করে মরুর বুক চিরে একটি ছোট্ট কাফেলা ইয়ামেনের পথে রওনা হল! কাফেলায় রয়েছে ফাকা ও বনু মাখজুমের নেতৃস্থানীয় কিছু লোক, হিন্দ, তার পিতা ও তার কয়েকজন সখী! পাহাড়ের পাশ কেটে, লতাগুল্মের পিঠ মাড়িয়ে মরুর পর মরু অতিক্রম করে তারা যখন ইয়ামেনের সীমান্তে পৌঁছলো! তখন হিন্দের চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো! উৎবা এতে দারুণ বিচলিত হল! বললো, তোমার আবার কী হল? তোমাকে এত বিষণ্ন ও বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন?

Rate the Post

Categories

Writers

Popular Books

Scroll to Top