বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; প্রফেসর সেলিম টি এস আল-হাসসানি লিখিত বই মুসলিম সভ্যতার ১০০১ আবিষ্কার এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
“১০০১ মুসলিম আবিষ্কার: মুসলিম সভ্যতার অনন্য গৌরবগাথা” বইটি সাড়া জাগানিয়া গ্রন্থ “১০০১ ইনভেনশনস” অবলম্বনে রচিত। এমন একটি বই প্রকাশ করতে পেরে আমি আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করছি। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষকদের সম্মিলিত প্রয়াস এই বই। বইয়ের প্রতিটি তথ্য যাচাইকৃত এবং বিভিন্ন নামীদামী জার্নাল ও গবেষণাপত্রে প্রকাশিত। এমন একটি বই প্রকাশের আশা নিয়ে ইমদাদ হোসেন ভাই যখন আমার কাছে প্রস্তাব রাখে, তখন আমি দেখেই হ্যাঁ বলে দিই দ্বিতীয়বার আর ভাবতে হয়নি।
মুসলিম উম্মাহর প্রায় সকল অবদান লিপিবদ্ধ হয়েছে দু’ মলাটে। কফির ঘ্রাণ হয়ে সাবান ও শ্যাম্পুর পরশ নিয়ে বিদ্যালয়, বাজার, হাসপাতাল, মহাকাশ, বিশ্বসহ প্রায় একশ’রও বেশি অধ্যায় ঘুরে আপনি এমন অজানা মুসলিম মনীষীদের যাচাইকৃত অবদানের সন্ধান পাবেন, দুঃখজনকভাবে যার শতকরা ৯৫ ভাগই আমাদের অজানা।
ইবনে সীনা থেকে শুরু করে যে ক’জন হাতে গোনা মুসলিম মনীষীদের নাম উল্লেখ করে আমরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলি, এই বই তাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাবে যে, কতটা বেখবর তারা। আমরা নিজেরাই যদি নিজেদের অতীতকে ঠিক মতো না জানি, তবে সামনে এগুবো কী করে। কীভাবে হাতে নেবো সংস্কারের উদ্যোগ। আশা করা যায়, এই বইটি বহু মুসলিম তরুণের মনে নিয়ে আসবে সৃজনশীলতার অদম্য স্বপ্ন – ইনশাআল্লাহ।
নানা কারণে বইটি প্রকাশে বিলম্ব হতে থাকে। মূলত প্রকাশনী তো আর এক বা দু’টো বইয়ের উপর চলে না বিধায় নানা বিষয়ের উপর বিভিন্ন বই প্রকাশের পাশাপাশি বইয়ের মানের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। এসব কারণে অন্যান্য বই প্রকাশের ভিড়ে এই বইটি চাপা পড়ে যায়। অন্য দশটি সাধারণ বইয়ের মতো না হওয়ায় এটার অনুবাদ করাটা সহজসাধ্য ছিল না। মনে পড়ে, প্রতি রাতে ইমদাদ ভাইকে ফোন দিয়ে বলতাম, ভাই, আর কতদূর। তিনিও স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে একটা সময় সীমা দিয়ে দিতেন। আর আমিও আমার স্বভাবের বশে দিয়ে দিতাম নানা সম্পাদনার কাজ। এভাবে সময় গড়ায় এবং ২০২২-এর জানুয়ারিতে সব কাজ শেষ হয়, আল-হামদুলিল্লাহ।
বইটির প্রকাশে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হয়েছে। এমন চ্যালেঞ্জিং ও সৃজনশীল কাজকে বাংলাভাষীদের জন্য সহজলভ্য করতে পেরে আমরা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। ভুলত্রুটিগুলি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। আল্লাহ যেন বইটিকে কবুল করেন, এই দু’আ করি।
১০০১ মুসলিম আবিষ্কার: মুসলিম সভ্যতার অনন্য গৌরবগাথা” গ্রন্থটি 1001 Inventions: The Enduring Legacy of Muslim Civilization অবলম্বনে রচিত। মূল সংকলনটি যাদের শ্রমে ও অধ্যবসায়ে চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে, তাদের সকলে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ; এই সংকলনে পেশ করা প্রতিটি তথ্য যাচাইকৃত এবং বিশেষজ্ঞদের দ্বারা মূল্যায়িত (peer-reviewed)।
আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন দৃষ্টিনন্দন বইটি বিশ্ব মহলে বেশ সাড়া ফেলে। সাড়া ফেলবেই না কেন, যেখানে ভাবা হয় যে গ্রিক, রোমান সভ্যতা হয়ে মানব সভ্যতা রেনেসাঁর মাধ্যমে ক্রমশ উন্নতির পথে এগিয়েছে, সেখানে আরবের মরু বেদুইনারা দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছাড়া বিশ্বের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছুই দিতে পারেনি। হ্যাঁ, যদি কিছু দিয়ে থাকে, তবে তা Dark Ages বা অন্ধকার যুগ। এই মিথকে বইটি একেবারে ভেঙে দিয়েছে এবং প্রমাণ করেছে যে, বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গ্রিক, রোমান, পারস্য ইত্যাদি সভ্যতা হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ইউরোপে এক লাফে আসেনি, বরং তা এক সোনালি যুগ পাড়ি দিয়ে এসেছে, যার কারিগর ছিল তিন মহাদেশে বিস্তৃত বৃহত্তর মুসলিম সভ্যতা।
আজকের জ্ঞান-বিজ্ঞান যে উচ্চতায় আসীন হয়েছে, তার পিছনে গ্রিক, রোমান ও অন্যান্য সভ্যতার যত অবদান! তার চেয়ে বেশি অবদান বৃহত্তর মুসলিম সভ্যতার! এটা কোনো অতিশয় উক্তি নয়, বরং অকাট্য সত্য! দুঃখজনকভাবে এই সত্যটুকুর দশ ভাগের এক ভাগও আমরা মুসলিমরাই জানি না।
আমরা ক’জনে জানি –
ফাতিমা আল ফিহরী ফেযে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বনী মূসার তিন ভাই ছিলেন ট্রিক ডিভাইসের পথিকৃৎ।
ক’জনে জানি আয-যাহরাবীর কথা, যার উদ্ভাবিত সার্জারী যন্ত্রের ট্রে দেখলে কখনো মনে হবে না যে, এগুলো ১০০০ বছর পূর্বের! দেহের অভ্যন্তরের সেলাই ক্যাটগাটের ব্যবহারের পাশাপাশি আয-যাহরাবী ছিলেন ক্যাপসুল উদ্ভাবনের অগ্রনায়ক।
যেং হো-র কথা ক’জনে জানি, যিনি ফুটবল মাঠের সমান ৬২-টি জাহাজের বহর নিয়ে সমুদ্রে রাজ করেছিলেন? ৪০০ ফুটের অধিক দৈর্ঘ্যের এসব জাহাজের কাছে ভাস্কো দাগামা ও ক্রিস্টোফার কলাম্বাসের জাহাজ তো ডিঙি নৌকার মতো।
মুসলিম স্পেন তথা আন্দালুসের আব্বাস ইবনে ফিরনাস প্রথম প্যারাস্যুট জাম্প করেছিলেন।
এক হাজার বছর পূর্বের আব্বাস ইবসে ফিরনাস নামের এক স্বপ্নচারীর সফল উড্ডয়ন হয়ে লাগারী হাসান! আহমাদ চেলেবীর মতো মুসলিমদের উড়বার প্রচেষ্টার ক্রমবিকাশের ধারায় এ বিজ্ঞান লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিসহ বহু পথ পাড়ি দিয়ে রাইট ব্রাদারদের কাছে পৌঁছে ছিল।
ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্ব এখন তোলপাড়, কিন্তু এটার আদিতেও রয়েছে মুসলিমদের বিচরণ! আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে ইংল্যান্ডে প্রথম ভ্যাকসিন আনা হয় অটোমান তুর্কিদের থেকে।
গোটা ইউরোপ জুড়ে যে গথিক ও রোমান স্থাপত্য শৈলী দেখা যায়, আদতে সেটাকে যদি ইসলামী স্থাপত্যের পশ্চিমা সংস্করণ বলা হয়, তবে তা মোটেও অতিরঞ্জন হবে না।
হাতে থাকা মোবাইল ক্যামেরা নিয়ে প্রতিনিয়ত ছবির পর ছবি তুলছি, সেই ক্যামেরা শব্দই এসেছে আরবী ‘কামারা’ থেকে এবং এর সাথে জড়িয়ে আছে ইবনুল হাইছামের নাম, যার দেয়া মূলনীতির উপর দাঁড়িয়ে আছে ক্যামেরার কার্যক্রম।
চক্রাকার গতিকে সরলরৈখিক গতিতে রূপান্তরকারী এবং পাম্প ও ইঞ্জিনের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ ‘ক্রাংক ও সংযুক্ত রড সিস্টেম’ না হলে শিল্প বিপ্লব একেবারে অসম্ভব ছিল, আর এই একটি অবদানের জন্যই বর্তমান সময়ের হিসেবে আল-জাযারীর একাধিক নোবেল পাওয়ার কথা।
অরেঞ্জ (orange), সুগার (sugar), জিরাফ (giraffe)-এর ন্যায় এমন বহু শব্দের উৎস আরবী ও ফারসি।
এমন বহু বিস্ময়য়কর তথ্যে ছেয়ে আছে এই বইয়ের প্রতি পাতা! রীতিমতো অবাক হওয়ার মতো বিষয়! গৃহ, বিদ্যালয়, বাজার, হাসপাতাল, নগর, বিশ্ব ও মহাবিশ্বসহ এই বই মোট ৯টি বিভাগে বিভক্ত এবং এতে রয়েছে ৮৯-টি অধ্যায়! ৮৯-টি অধ্যায় এবং প্রাসঙ্গিক চিত্র ও মানচিত্র হয়ে আপনি হারিয়ে যাবেন এক রোমাঞ্চকর জগতে! যেখানে সৃজনশীলতা ও কর্মচাঞ্চল্য ছিল প্রধান চালিকাশক্তি! নতুনকে জানার অদম্য বাসনা তাড়িয়ে বেরিয়েছে সে জগতের মানুষদের।
“১০০১ মুসলিম আবিষ্কার” আপনাকে নিয়ে যাবে অজানার এক নতুন জগতে, বলতে গেলে: যার কিছুই আমরা তেমন জানি না! অথচ এটার শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে আধুনিক সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
বর্তমানে মুসলিমদের অবস্থা যাই হোক না কেন, অবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন স্বপ্ন দেখা এবং সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য প্রয়োজন কঠোর শ্রমের! “১০০১ মুসলিম আবিষ্কার” আপনাকে সে স্বপ্ন দেখাবে! আপনাকে জানিয়ে দেবে: আপনার অতীত হতাশার কালো মেঘ নয়, বরং তা অন্য যেকোন সভ্যতার চেয়ে অগ্রগামী।
সৃজনশীল ও স্বপ্নচারী উদ্যমী মুসলিমগণ যেভাবে রচনা করেছিলেন সোনালি মহাকাব্য, সেটা ফিরিয়ে আনা সম্ভব! যদি আমাদের চিন্তাশীল একটা অংশ সে লক্ষ্যে শ্রম দিতে এগিয়ে আসে! এই বইয়ের শেষাংশে এ নিয়ে কিছু পর্যালোচনা থাকবে, আর সেখানেই আবার দেখা হবে – ইনশাআল্লাহ।
দেরী না করে চলুন হারিয়ে যাই উদ্যম ও সৃজনশীলতার এক সোনালি অধ্যায়ে! আর জড়ো করি স্বপ্ন ও এগিয়ে যাওয়ার এক ফালি অভিলাষ।