বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; মুহাম্মদ সিদ্দিক আল মিনশাবি লিখিত বই গল্পে গল্পে হযরত উসমান রাঃ এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
আমীরুল মুমিনীন উসমান বিন আফফান -ইসলামের তৃতীয় খলিফা ছিলেন। তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজনের একজন ছিলেন। তিনি নবী করীম সাঃ-এর জামাতা ছিলেন। নবী করীম সাঃ-এর দুই কন্যাকে বিয়ে করার কারণে তাঁকে যুন নূরাইন (দুই নূরের অধিকারী) উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল।
তিনি মক্কা মুকাররমায় আমুল ফিলের ছয় বছর পর জন্মগ্রহণ করেন এবং এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে বেড়ে উঠেন। তাঁর বাবা তাঁর শিষ্টাচার, ব্যবহার ও জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে খুবই লক্ষ্য রেখেছেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া অর্জন করেন। আরবদের প্রচলিত কবিতা, তাদের বংশনামা, সাহিত্য, ইতিহাস এসব বিষয়ে তিনি অধ্যয়ন করেন। তৎকালীন আরবদের শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য একজন ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন এবং একজন দক্ষ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি নিজেকে এক উত্তম চরিত্রে সুশোভিত করেছেন। তাঁর মাঝে উত্তম গুণাবলির সবগুলো ফুটে উঠেছে।
মানুষের কাছে তাঁর আলাদা এক মর্যাদাগত অবস্থান ছিল। ইসলাম আসার পূর্বেও তিনি সকলের সম্মানের পাত্র ছিলেন। তিনি কখনো মূর্তির সামনে সিজদাহ করেননি। তিনি দানশীলতা ও দয়ার কারণে সবার কাছে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁকে মনে হতো তিনি এক পাহাড়, যে পাহাড়ের উপর জ্ঞান রাখা হয়েছে। তিনি একজন বিশ্বস্ত আমানতদার ছিলেন। অগ্রগামীদের সাথে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন, চৌত্রিশজন ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনি ইসলাম গ্রহণে পঁয়ত্রিশতম। ইসলাম গ্রহণ করার কারণে তাঁর চাচা তাঁকে বন্দি করে শাস্তি দিয়েছে এবং কঠোর তিরস্কার করেছে। তবুও তিনি ঈমানের ওপর অটল ছিলেন। হিজরতের অনুমতি পাওয়ার পর তিনি দুইবার হিজরত করেন। একবার হাবশায় অতপর মদিনায়।
তিনি রাসূল সাঃ-এর কন্যা রুকাইয়া ও উম্মে কুলছুমকে বিয়ে করেছেন। তাঁর বিয়ে আসমানের অহীর মাধ্যমে হয়েছে। তাঁর জীবন সৌভাগ্য ও পুণ্যতে পরিপূর্ণ। তিনি রাসূল সাঃ-এর সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন এবং নিজ তরবারিকে উন্মুক্ত করে লড়াই করেছেন। বদরের যুদ্ধে তাঁর স্ত্রী ও রাসূল মাতাহার-এর কন্যা অসুস্থ থাকায় রাসূল তাঁকে মদিনায় রেখে গেলেন। তবে তিনি তাঁকে যুদ্ধের একজন হিসেবে গণ্য করেছেন এবং তাঁকে গনিমতের অংশও প্রদান করেছেন। হুদাইবিয়ার সময় রাসূল তাঁকে মক্কায় প্রেরণ করেন। বাইয়াতে রেদওয়ানে রাসূল নিজের হাতকে তাঁর হাতের পরিবর্তে পেশ করেছেন।
তিনি কোমল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। তাঁর দাড়ি অনেক লম্বা ছিল, চেহারা অনেক সুন্দর ছিল, খুব খাটও ছিলেন না আবার লম্বাও ছিলেন না এবং হাত পাগুলো অনেক লম্বা ছিল। তাঁর বক্ষ চওড়া ছিল। তিনি সম্মান মর্যাদার পূর্ণ অংশ অর্জন করেছেন। তাঁর অনেক বিশেষত্ব ছিল। তাঁর থেকে অনেক অলৌকিকতা প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর কথা খুবই সুন্দর ছিল। তিনি ভালো বক্তৃতা দিতে পারতেন। চারিত্রিকভাবে তিনি খুবই পবিত্র ছিলেন। জাহিলী যুগেও তিনি যিনা-ব্যবিচার ও মদপান করেননি। তাঁর বীরত্বও অনেক ছিল। তিনি একজন দুনিয়াবিরাগী নেতা ছিলেন, খুবই ইবাদতগুজার ছিলেন। এমনকি তিনি এক রাকাত নামাযে কোরআন খতম করেছেন। তাঁর ধৈর্য অনেক বেশি ছিল।
তিনি অনেক বেশি শুকরিয়া আদায় করতেন। তাঁর নম্রতা ও লজ্জা অনেক বেশি ছিল। তাঁর দানশীলতার হাত ছিল বিশাল। তিনি একজন বিশ্বস্ত খলিফা ছিলেন। তিনি খুবই ধনী ছিলেন, কিন্তু এ ধন তাঁকে দুনিয়াবী করে দেয়নি। তিনি নিজ অর্থে মুসলমানদের জন্যে বীরে রুমা ক্রয় করে মুসলমানদের জন্যে ওয়াক্ফ করে দিয়েছেন। তিনিই তাবুকের যুদ্ধে সৈন্যদেরকে অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে সাজিয়েছিলেন। এত অর্থের মালিক হওয়ার পরেও তিনি সিরকা ও জায়তুন খেয়ে দিন কাটাতেন। তিনিই কোরআন শরীফকে পূর্ণাঙ্গরূপে লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি অল্প খাবারে সন্তুষ্ট থাকতেন এবং বেশি আমলে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন।
ওমর -এর ইন্তিকালের পর তিনি খেলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। খলিফা হওয়ার পর তিনি ইসলামের ঝাণ্ডাকে উপরে তুলে ধরলেন। তাঁর হাতে আরমেনিয়া বিজয় হয় এবং আফ্রিকায় অভিযান করা হয়। তাঁর আমলেই মুসলমানরা খুরাসানে প্রবেশ করে এবং ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা তিবরিস্তানের কাছে পৌঁছে যায়। তিনি প্রথম মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববী প্রশস্ত করেন। জুমার প্রথম আযান দেওয়ার ব্যাপারে তিনিই নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি পুলিশ বাহিনী তৈরি করেছেন এবং বিচারের জন্যে আলাদা কার্যালয় নির্ধারণ করেছেন।
তিনি সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ থেকে পরামর্শদাতা নিয়োগ করেছেন। তাঁর নয়জন ছেলে ছিল আর হুরের মতো সাতজন মেয়ে ছিল। তাঁর খেলাফতের শেষকালে বিদ্রোহ দেখা দেয়। অবশেষে বিদ্রোহীরা তাঁকে হত্যা করে। তিনি শহীদ হয়ে এ দুনিয়া ত্যাগ করেছেন। তাঁর রক্তে কোরআনে কারীম রঞ্জিত হয়েছে। তিনি যখন শহীদ হয়েছেন তখন তিনি রোযাদার ছিলেন। স্বপ্নে রাসূল শস্ত্র তাঁকে তাঁর সাথে ইফতার করার কথা বলেছেন। আর তাই তিনি সেদিন রোযা রেখেছেন এবং রোযা অবস্থায় শহীদ হয়েছেন।
তিনি হিজরি তেইশ সালের সোমবার খিলাফত প্রাপ্ত হয়েছেন আর পঁয়ত্রিশ হিজরির শুক্রবার শহীদ হয়েছেন! শনিবার মাগরিব ও ইশার নামাযের মাঝ সময়ে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। তাঁকে যে জমিনে দাফন করা হয়েছে তা তাঁর ক্রয় করা জমিন ছিল। পরে তাঁর এ জমিনকে জান্নাতুল বাকির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ কিতাবটি ছোট ছোট শিক্ষণীয় ঘটনার কিতাব! আমি এ কিতাবে তৃতীয় খলিফা আমীরুল মুমিনীন উসমান বিন আফ্ফান এক্স-এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো একত্রিত করেছি! আমি এখানে তাঁর মর্যাদা তুলে ধরেছি, তাঁর আখলাক ও আচার-ব্যবহারের বর্ণনা দিয়েছি এবং তাঁর অবস্থান বর্ণনা করেছি! তাঁর বীরত্ব তুলে ধরেছি। তাঁর ওপর আরোপিত মিথ্যা অপবাদগুলো খণ্ডন করেছি! যাতেকরে তা মুসলমানদের জন্যে পথের দিশারি ও স্মরণ করার মতো হেদায়েত হয়! আল্লাহ তা’আলাই মুত্তাকীনদের অভিভাবক।