Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

তুমি ফিরবে বলে ফিমেল ভার্সন pdf

তুমি ফিরবে বলে ফিমেল ভার্সন pdf Info

তুমি ফিরবে বলে ফিমেল ভার্সন pdf Description

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; জাকারিয়া মাসুদ লিখিত বই তুমি ফিরবে বলে ফিমেল ভার্সন এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।

আমি তোমাকে যে কিংবদন্তির কাহিনি শুনাতে চাচ্ছি, তার নাম মুসআব। বাবার নাম উমাইর। মা খুনাস বিনতু মালিক। মক্কার এক অভিজাত পরিবারে যার জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন মক্কার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বাবা-মা’র অনেক আদুরে সন্তান ছিলেন মুসআব। ছোটোবেলা থেকে অঢেল বিত্তের মাঝে বেড়ে উঠেছেন। দুঃখ-ক্লেশ, দারিদ্র্য, না পাওয়ার বেদনা তাঁকে স্পর্শ করেনি কখনও৷ আদরের সন্তান হওয়ায় যখন যা চেয়েছেন, পেয়েছেন তার চেয়ে ঢের বেশি। মুসআবের বাবা তাঁর জন্যে এমন পোশাকের অর্ডার দিতেন, যা মক্কায় পাওয়া যেত না। সিরিয়া কিংবা ইয়ামান থেকে রয়‍্যাল ব্র্যান্ডের পোশাক আসত তাঁর জন্যে। নামিদামি ব্র্যান্ডের আতর ব্যবহার করতেন তিনি।

সে আতরের এমন হতো যে, তিনি কোনো পথ দিয়ে গেলে মানুষজন তা আন্দাজ করতে পারত। মানুষ বুঝত, এই আতর মুসআব ছাড়া অন্য কারও নয়। তাঁর চালচলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, কথাবার্তায় ছিল আভিজাত্যের ছাপ। আর এই জন্যেই মক্কার অন্যান্য যুবকদের থেকে তাঁকে সহজেই আলাদা করা যেত। যুবক হওয়া সত্ত্বেও বড়ো বড়ো নেতাদের সমাবেশে স্থান হতো তাঁর। কুরাইশদের এই সম্ভ্রান্ত ছেলেটি অংশ নিতেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজে। মেধা, প্রজ্ঞা আর অভিজাত ব্যক্তিত্বের কারণে কুরাইশদের প্রিয়পাত্র ছিলেন তিনি। অসাধারণ বাগ্মিতা ছিল তাঁর। ব্যক্তিত্ব ছিল চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। এই অসাধারণ ব্যক্তিত্বই তাঁকে সত্যের পথের পথিক হতে উদ্বুদ্ধ করে।

একদিন তিনি শুনতে পেলেন — মুহাম্মাদ (সাঃ) নাকি নতুন দ্বীন প্রচার শুরু করেছেন। আর দিন দিন সে দ্বীনের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে মানুষ। প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছে মুহাম্মাদ এ-এর অনুসারীর সংখ্যা। কুরাইশদের শত অত্যাচারের মুখেও মাথা নত করছে না তাঁরা। যত অত্যাচার করা হচ্ছে, তাদের ঈমান তত মজবুত হচ্ছে। এসব শোনার পর তিনি ভাবতে লাগলেন—কেন মানুষ মুহাম্মাদের দিকে এতটা ঝুঁকে পড়ছে? প্রশাসনের লোকেরা তাঁকে জাদুকর বলছে, পাগল বলছে। আবার কেউ-কেউ বলছে মুহাম্মাদকে জিনে ধরেছে। আসল ব্যাপারটা কী? তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সরাসরি মুহাম্মাদ এ-এর সাথে দেখা করবেন।

খোঁজ নিয়ে জানলেন, মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথিরা মাঝে মধ্যে জড়ো হন আরকামের বাড়িতে। সাফা পাহাড়ের পাদদেশেই আরকামের বাড়ি। সব দ্বিধা ঝেড়ে একদিন সন্ধেবেলায় আরকামের বাড়িতে হাজির হলেন তিনি। পৌঁছে দেখলেন মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথিরা সেখানে বসা। তিনিও বসে গেলেন তাদের পাঠচক্রে। মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন মুহাম্মাদ -এর কথাগুলো। ইতোমধ্যে জিবরীল এলেন। কুরআনের আয়াত নাজিল হলো। রাসূল সাহাবিদের তা পাঠ করে শোনালেন। মুসআব হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করলেন আয়াতগুলো। অন্যরকম এক শিহরন অনুভব করলেন হৃদয়ে। আয়াতগুলো তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতে লাগল। চোখেমুখে ফুটে উঠল পরিবর্তনের ঢেউ। মুহাম্মাদ এটি তাঁর দিকে তাকালেন। পবিত্র হাত রাখলেন মুসআবের বুকের ওপর। গভীর প্রশান্তি অনুভব করলেন মুসআব। ঈমান তাঁর অন্তরে দৃঢ়তর হলো। এদিনই মুসলিম হলেন তিনি।

মুসআব তাঁর মাকে খুব ভয় করতেন। তাই ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখলেন। চুপি চুপি যেতে লাগলেন রাসূল -এর পাঠচক্রে। দারুল আরকামে যাওয়া-আসাও চলতে থাকল। একদিন দারুল আরকামে ঢোকার সময় উসমান ইবনু তালহা দেখে ফেলল তাঁকে। আরেকদিন সালাত আদায় করার সময়ও ধরা পড়লেন ইবনু তালহার হাতে। ফলে তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবরটি প্রকাশিত হয়ে গেল। বাতাসের বেগে সে খবর ছড়িয়ে পড়ল মক্কার অলিতে-গলিতে। পৌঁছে গেল তাঁর মা’র কাছেও। মক্কার মুশরিকরা যারপরনাই বিস্মিত হলো। তারা কোনোভাবেই বিষয়টা মেনে নিতে পারছিল না। মুসআবের মতো প্রিন্স কীভাবে মুহাম্মাদ -এর ওপর ঈমান আনতে পারে? তবে কি মুসআবের মতো প্রজ্ঞাবান যুবকের ওপরেও মুহাম্মাদ এর জাদু করল?

মুসআবকে হাজির করা হলো মুশরিক নেতাদের সামনে। তাঁর মা-কেও ডেকে আনা হলো। শুরু হলো উপদেশ-পর্ব। সবাই মিলে তাঁকে বোঝাতে লাগল, এটা তুমি কী করলে? অভিজাত বংশের ছেলে হয়েও গরিবদের সাথে বসে গেলে? এত বিচার- বিবেচনাবোধ থাকা সত্ত্বেও কিনা মুহাম্মাদের কথায় প্রভাবিত হলে? মুহাম্মাদ এত সহজেই তোমার ব্রেইন ওয়াশ করে দিলো?

ওদের কথাগুলো মুসআবের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারল না। একটুও বিচলিত হলেন না তিনি। উপদেশ-পর্ব শেষ হলে তিনি তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন কুরআনের অমিয় বাণী। তিলাওয়াত শুনে মা রাগান্বিত হলেন। মারধর ও করলেন। কিন্তু চুপ করে সব সয়ে নিলেন মুসআব। এই অবস্থা দেখে মুশরিকরা আরও ক্ষোভে জ্বলতে লাগল।

সেদিন বাড়ি ফেরার পর তাঁর মা তাঁকে ঘরে বন্দি করে রাখলেন। একেবারে তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তার মধ্যে বন্দি করা হলো প্রিন্স মুসআবকে। বন্দি অবস্থায় চলতে থাকল নানান নির্যাতন। বারবার তাঁকে ইসলাম ত্যাগ করার কথা বলা হলো। কিন্তু এক চুলও নড়লেন না তিনি। সৃষ্টির ভয় তাঁকে স্রষ্টার ওপর আনীত ঈমান থেকে ফেরাতে পারল না। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা বলেছেন, সৃষ্টিকে কেবল সে-ই ভয় করতে পারে, যার অন্তরে রোগ আছে।

মুসআবের অন্তর ছিল পবিত্র, কলুষতামুক্ত। এমন অন্তর কীভাবে সৃষ্টির অত্যাচারে ভীত হতে পারে? তাই তো অত্যাচারের পর অত্যাচারও টলাতে পারল না তাঁকে। একদিন সবার চোখে ধুলো দিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন তিনি। হিজরত করলেন হাবশায়। কিন্তু মনটা যেন মক্কাতেই রয়ে গেল। যার জন্যে বাড়িঘর ছেড়েছেন, পরিবার ছেড়েছেন, আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়েছেন—তাঁকে মক্কায় রেখে কীভাবে শাস্তিতে ঘুমোবেন!

তিনি হাবশা থেকে ফিরে এলেন মক্কায়। মক্কায় আসার পর মা তাঁকে আবার বন্দি করতে চাইলেন। নির্ভীক মুসআব এবার কসম খেয়ে বললেন, ‘মা! আল্লাহর শপথ! যদি তুমি এমনটি করো আর কেউ যদি এ কাজে তোমাকে সাহায্য করে, তা হলে আমি তোমাকে-সহ সবাইকে হত্যা করব।’ ছেলের কথা শুনে মা ভীত হলেন। মা জানতেন—তার সন্তান ভয়ানক জেদি। ছেলে যেহেতু কসম কেটেছে, তাই তাঁকে আর ফেরানো সম্ভব হবে না। কিন্তু তিনি অনেক ভালোবাসতেন মুসআবকে। তাই বারবার তাঁকে ঈমান ছেড়ে দিয়ে বাসায় থেকে যাওয়ার জন্যে অনুনয়-বিনয় করলেন! কিন্তু কিছুতেই রাজি হলেন না মুসআব। মানুষের ভালোবাসা কখনোই আল্লাহর ভালোবাসার ওপর প্রাধান্য পেতে পারে না।

Rate the Post

Categories

Writers

Popular Books

Scroll to Top