বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; খুররম মুরাদ লিখিত বই খোশ আমদেদ মাহে রমজান এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
১. রমজানুল মোবারক মাস সেসব নেয়ামত সমূহের মধ্যে একটি নেয়ামত যা আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দান করেছেন। এ মাসে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ স.-এর মত নেয়ামত আমরা পেয়েছি। এ মাসেই কুরআন মাজীদ দেয়া হয়েছে, যা হেদায়াত, ফুরকান, রহমত, নূর ও শেফা। এ মাসেই বদর যুদ্ধ হয়েছে। বদরের দিন উম্মতের জন্য ইয়াওমুল ফুরকান বা পার্থক্য সৃষ্টিকারী দিন। বদরের রণক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী সেই ঐতিহাসিক সংগ্রাম এ মহান মাসেই সংঘটিত হয়েছিল, যাদের ধ্বংস ছিল অনিবার্য তারা সুস্পষ্ট দলিল সহ এ যুদ্ধে পরাজিত শক্তি হিসেবে সকল শক্তি-সামর্থ ও অবস্থান নিয়ে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। আর যারা সত্যাশ্রয়ী ও সত্যপন্থী হিসেবে বদরের রণক্ষেত্রে এসেছিলেন, তারা সুস্পষ্ট দলিল সহ বিজয় লাভ করেন। রমজানের এ মহান মাসেই ৮ম হিজরী সালে মক্কা বিজয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা মানবেতিহাসের এমন এক মহান ঘটনা যে, সেদিন বিনা রক্তপাতে পবিত্র মক্কা নগরীর চাবি উম্মতের হাতে বা নেতৃত্বে চলে আসে যা আজ অবদি আছে।
২. মুসলিম উম্মাহর প্রাণস্পন্দন ও উন্নতির নিগূঢ় রহস্য ফী সাবিলিল্লাহর মাঝেই পাওয়া যায় প্রথম মানুষের বা মানবতার হৃদয় জয় করার জন্য জিহাদ, পরে সাংস্কৃতিক বিজয়ের জন্য জিহাদ — আর এ সকল জিহাদের সাথে সাথে চূড়ান্ত কামিয়াবীর জন্য আপন নফসে আম্মারার বিরুদ্ধে জিহাদ। যাতে করে অর্জিত হয় তাকওয়া, ব্যক্তিগত তাকওয়া এবং সাথে সাথে সমষ্টির তাকওয়া ; রাতে জাগরণে শীতের রাতে ইশকের সাথে ওযু করা, লাইফে সাদাকাত (দান-খয়রাত) দিয়ানত, আমানত, আদালত (সুবিচার করা), সুজাত (নির্ভীকতা), উথুয়াত (ভ্রাতৃত্ব) ও মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান। মাহে রমজান ইলম ও আমলের সে মহান পথ বা তরীকা বাতলে দেয় যদ্বারা এ সকল কিছুই হাসিল করা সম্ভব।
৩. নবী করীম স. রমযানের আগমনের পূর্বেই সাহাবীদের এ মহান ও বরকতময় মাসের অসীম ভাণ্ডার থেকে ফায়দা হাসিল করার জন্য প্রস্তুত করতেন। এ ওসওয়ায়ে নবী স.-এর অনুসরণে আমি তাই করার চেষ্টা করেছি। এজন্য হয়ত আমার নামও নবী করীম স.-এর বিনীত তম অনুসারীদের কাতারে শামিল হবে। এ প্রত্যাশায় কয়েক বছর পূর্বে ‘ইসতেকবাল রমজান’ শীর্ষক এক আলোচনা পেশ করি। এ আলোচনার ক্যাসেট বাজারে চলে আসে। অতঃপর সাধারণত আলোচনাগুলো পুস্তিকা আকারে তৈরি করতে হয় এবং পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়। এ বক্ষমান পুস্তিকাটি সেই আলোচনার সংবর্ধিত রূপ।
৪. এ পুস্তিকায় আমি বলতে চেয়েছি যে, কুরআন মাজীদ থেকে পথ লাভ করতে এবং কুরআন প্রদর্শিত পথে চলতে গিয়ে যে তাকওয়া অত্যাবশ্যক তা কেবলমাত্র কিয়ামুল লাইল ও রোজার দ্বারাই অর্জন করা সম্ভব। এখানে রমজান থেকে পরিপূর্ণ ফায়দা অর্জনের জন্য দশটি পয়েন্ট আলোচনার মাধ্যমে দশটি পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে। এ দশটি পদ্ধতি বা তরীকায় আমল করার এমন সহজ উপায় বর্ণনা করা হয়েছে যে, আশা করা যায় একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা পালন করা কঠিন হবে না।
৫. ইসতেকবাল রমজান ১৯৮৯ সালের মার্চ মাসে প্রথম প্রকাশিত হয়! এরপর ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পুস্তিকাটির সাত সাতটি সংস্করণ প্রকাশিত হয় যার মুদ্রণের সংখ্যা প্রায় ৮২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে! এক বছর বিরতির পর পুস্তিকাটি আমি আবার দেখে দিয়েছি ৮ম সংস্করণের জন্য! “এহইয়ায়ে উলুমুদ্দীন” পুস্তক থেকে ইমাম গাজ্জালী র.-এর কিছু শিক্ষণীয় বিষয়ও এখানে তুলে ধরা হয়েছে! যা শিক্ষার্থীদের উপকারে আসবে বলে আশা করি।
৬. পরিশেষে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট বিনীত দোয়া তিনি যেন আমার এ নগণ্য প্রচেষ্টাকে কবুল করেন! আমার কোনো কথা যেন আল্লাহর নিকট আমার বিরুদ্ধে দলিল হয়ে না যায় এ আমার ঐকান্তিক কামনা! হে আল্লাহ! আমাকে ‘লিমা তাকুলুনা মা লা তাফ আলুন’ (অর্থাৎ তোমরা কেন এমন কথা বল, যা কার্যত কর না!) আয়াতটির মানদণ্ডে দণ্ডপ্রাপ্তদের কাতারে শামিল হওয়া থেকে বাঁচাও।
আমার আসল অর্জন পাঠকদের প্রশংসা নয় বরং আল্লাহর নিকট কবুলিয়াতই কামনা করি! আমার আরো একটি পাওনা হবে আপনাদের আমল; আর আমার জন্য আপনাদের দোয়া! এজন্যই সকলের নিকট আমার আপীল যদি এ লেখা আপনাদের কোনো উপকারে আসে তাহলে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন! আল্লাহ যেন আমার জীবন ঈমানের উপর শেষ করেন এবং আমাকে তাঁর মাগফেরাতের আশ্রয়ে আশ্রিত করেন। আমীন।