Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা. pdf

খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা. pdf Description

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; ড. আলী মুহাম্মদ সাল্লাবি লিখিত বই খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা. এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।

খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা.—নাম শুনলেই মনের ভেতর একটা তেজ জেগে ওঠে। তির-তরবারির ঝনঝনানির কেমন একটা আওয়াজ কানে ভেসে আসে। আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান হওয়ার রসদ জোগায়। শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় নুয়ে আসে মনোজগত। পৃথিবীর সেরা বাসস্থান মক্কার পাদদেশেই খালিদের জন্ম; কুরাইশের শাখা বনু মাখজুমের নেতৃপুরুষ ওয়ালিদ ইবনু মুগিরার ঔরসে। ঐতিহ্যগতভাবেই কুরাইশদের সেরা যোদ্ধা আর কমান্ডার সবাই ছিলেন বনু মাখজুমের। তাই বংশপরম্পরায় নেতৃত্ব ও বাহাদুরির বিভা খালিদের ধমনিতে বয়ে বেড়াচ্ছিল শৈশব থেকে।

ফলে কৈশোর পাড়ি দেওয়ার আগেই অমিত সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হন তখনকার আরবের সরদারগোত্রখ্যাত বনু আবদি মানাফে। তীক্ষ্ণ মেধা ও ধীশক্তি দিয়ে অনায়াসে রপ্ত করে নেন ঘোড়সওয়ারি ও তির-তরবারি চালনা। পিছিয়ে ছিলেন না কৃষিবিদ্যায়ও। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হওয়ায় টাকাপয়সা উপার্জনের কোনো ফিকির ছিল না, ফলে তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে বেশ সুখেই। তাই পুরোটা সময় যুদ্ধবিদ্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ফলে ব্যক্তিত্ব, বাহাদুরি আর নেতৃত্বগুণে অল্পবয়সে পুরো কুরাইশে তিনি হয়ে ওঠেন অনন্য। আরবের সর্বমহলে বেশ বরিত। যুবক বয়সে দায়িত্ব পান সেনাক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা ও অশ্বারোহী বাহিনী পরিচালনার।

মোটকথা, জাহিলি যুগেই খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা. একজন নেতা হিসেবে গণ্য হয়ে আসছিলেন। পিতা ওয়ালিদ ইবনু মুগিরা বংশাভিজাত্য, মেধা, সাহসিকতা ও নেতৃত্বগুণে ছিলেন আরবসমাজের মান্যপুরুষ। ফলে নবিজি তার ইসলামগ্রহণের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু ওয়ালিদের ভাগ্যসিতারায় ইসলামের দ্বীপশিখা জ্বলে ওঠেনি। খালিদের ধমনিতেও পিতৃপুরুষের সেই অমিত তেজ ছিল দেদীপ্যমান। ইসলামগ্রহণের আগে মুসলিমদের মোকাবিলায় ছিলেন কঠোর- পাষাণ দিল। উহুদযুদ্ধে তো কুরাইশদের ‘ইজ্জত’ রক্ষার নেপথ্যনায়ক তিনি। তাঁর বীরত্বেই মুসলিমদের সাময়িক পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয়েছিল সেদিন।

ইসলাম তখন ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছিল। নববি সূর্যকিরণ ছড়িয়ে পড়ছিল নিদিগন্তে। দলে দলে লোকজন ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছিল। খালিদের মনেও একসময় ইসলামের সত্যতা ফুটে ওঠে। বুঝতে পারেন, শেষপর্যন্ত রাসুল -ই বিজয়ী হবেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলের বিরুদ্ধে প্রতিটা যুদ্ধে উপস্থিত থাকলেও দেখতে পাচ্ছিলাম, প্রতিটা ক্ষেত্রেই তিনি বিজয়ী হচ্ছেন; আর আমরা পরাজিত হচ্ছি। মনে হচ্ছিল অচিরেই তিনি পুরো আরবে বিজয়ী ও নেতৃত্ব প্রদানকারী হিসেবে আবির্ভূত হবেন।

এদিকে রাসুল ও তাঁর ইসলামগ্রহণের জন্য দুআ করতেন। এ দুআর বরকতে আল্লাহর রহমতে সপ্তম হিজরিতে খালিদ ইসলামের ছায়াতলে চলে আসেন। খালিদের বীরত্ব, সাহস, মেধা ও রণকৌশলে মুগ্ধ হয়ে রাসুল তাঁকে ‘সাইফুল্লাহ’ তথা ‘আল্লাহর তরবারি’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ইসলামগ্রহণের পর মাত্র ১৪ বছর জীবিত ছিলেন তিনি। এ অল্প সময়েই শতাধিক যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন, তবে কোনো যুদ্ধেই পরাজিত হননি! রণকৌশলে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। অপরাজেয় এই বীর সেনার হুংকারে প্রকম্পিত হয়ে উঠত কাফিরদের অন্তরাত্মা। তাঁর তির-তরবারির ঝলকানি দেখে মুহূর্তেই শত্ৰুশক্তি নেতিয়ে পড়ত। শত্রুপক্ষের কাছে তিনি ছিলেন সাক্ষাৎ যমদূত।

ছিলেন ইসলামি ইতিহাসে এমন এক মহান সেনাপতি, যিনি রণক্ষেত্রে নিজের শক্তি ও মেধা দিয়ে ইসলামের ঝান্ডা সমুন্নত করেছিলেন। নববি যুগ থেকে খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের যুগ পর্যন্ত প্রবল প্রতাপে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। ইতিহাসের এই মহানায়কের জীবন ও কর্ম নিয়ে বাংলা ভাষায় উল্লেখযোগ্য কাজ হয়নি। আর পুরো জীবনালোচনা তো কোথাও নেই। ফলে খালিদের যুদ্ধজীবন ছাড়া তাঁর সম্পর্কে খুব একটা জানার সুযোগ নেই। এই শূন্যতা পূরণের সামান্য প্রয়াস বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি। গ্রন্থটির প্রায় ৯০% আলোচনা নেওয়া হয়েছে ড. আলি সাল্লাবির সিরাতুন্নবি গ, আবু বকর সিদ্দিক রা., উমর ইবনুল খাত্তাব রা., উসমান ইবনু আফফান রা. গ্রন্থ থেকে। এ ছাড়া কিছু আলোচনা প্রয়োজন ও ধারাবাহিকতা বিবেচনায় আমি জুড়ে দিয়েছি।

কারণ, খালিদ রা.-এর নাম, বংশতালিকা, জন্ম, বেড়ে ওঠা, পরিবার ও ইসলামপূর্ব যুগে তাঁর সামাজিক ও যুদ্ধজীবন সম্পর্কে ড. আলি সাল্লাবির লেখায় তেমন কিছু পাওয়া যায় না। ফলে তাঁকে নিয়ে লেখা কয়েকটি গ্রন্থসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নির্ভরযোগ্য বিবরণ পেশ করার চেষ্টা করেছি। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত রেফারেন্সও দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বাকি সব আলোচনাই ড. সাল্লাবির, যেখানে তাঁর ইসলামগ্রহণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, ইসলামগ্রহণ-পরবর্তী বিভিন্ন যুদ্ধে তাঁর বীরত্বপ্রকাশ, নেতৃত্বগ্রহণ, নবিজি কর্তৃক ‘সাইফুল্লাহ’ উপাধি লাভ, মক্কাবিজয়ের প্রাক্কালে রাসুলের পরিকল্পনা ও খালিদের ভূমিকা, মূর্তিধ্বংস, দাওমাতুল জানদাল অভিমুখে যাত্রা, তাবুকযুদ্ধ ও বিদায়হজের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এরপর ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকরের শাসনামলে খালিদ ইবনুল ওয়ালিদের জিহাদি অভিযান, ইরতিদাদি ফিতনা দমন, ভণ্ড নবিদের মোকাবিলায় তাঁর জিহাদি অভিযান, সাজাহ, বনু তামিম এবং মালিক ইবনু নুবায়রার হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে উম্মু তামিমের সঙ্গে খালিদের বিয়ে, ওমান ও বাহরাইনবাসীর ইরতিদাদ, মুসায়লিমাতুল কাজ্জাবকে কীভাবে দমন করা হয়েছিল, তা- ও। মুজ্জাআর প্রতারণা, মুজ্জাআর মেয়ের সঙ্গে খালিদের বিয়ে নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া আবু বকরের সঙ্গে পত্রযোগাযোগ, ইরাক অভিযানে পাঠানো এবং আবু বকরের পরিকল্পনা, হজপালন, শামের দিকে তাঁকে রওনার নির্দেশ এবং মুসান্নার হাতে ইরাকের নেতৃত্বভার অর্পণ সম্পর্কেও বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।

গ্রন্থটি পাঠ করলে আমরা আরও জানতে পারব শামে আবু বকরের বিজয়াভিযান, আজনাদায়ন ও ইয়ারমুকযুদ্ধ, আবু বকরের ইনতিকাল, উমরের খিলাফতগ্রহণ এবং খালিদের অপসারণ, ইরাক ও পূর্বাঞ্চল বিজয়ের দ্বিতীয় ধাপ এবং উমরের যুগে শাম বিজয় সম্পর্কে। জানতে পারব ইতিহাসের অপরাজেয় বীর খালিদ ইবনুল ওয়ালিদের মৃত্যুশয্যা, খলিফা উমর সম্পর্কে তাঁর আবেগি মন্তব্য ও ইনতিকাল ইত্যাদি সম্পর্কে। এ ছাড়া গ্রন্থটির শেষ দিকে খালিদের হাদিস বর্ণনা, তাঁর ফজিলত, দীনের অন্যান্য বিলমাত সম্পর্কেও কিছু ধারণা পাব।

বিশুদ্ধ ইতিহাস নিয়ে কাজ করা দেশের অন্যতম প্রকাশনাপ্রতিষ্ঠান কালান্তর প্রকাশনীর প্রকাশক মুহতারাম আবুল কালাম আজাদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল মহাবীর খালিদ ইবনুল ওয়ালিদের জীবনী প্রকাশ করা। আলহামদুলিল্লাহ, তাঁর আগ্রহ এবং সার্বিক সহযোগিতায় খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রা. গ্রন্থটি এখন পাঠকের হাতে। আল্লাহ তাআলা লেখক, পাঠক, সম্পাদক, প্রকাশক, সংকলকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উত্তম বিনিময় দিন। গ্রন্থটিতে ভাষা, বানান, তথ্য ও তত্ত্বগত কোনো ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে পরবর্তী মুদ্রণে সংশোধন করে নেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

Rate the Post

Categories

Writers

Popular Books

Scroll to Top