বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; ইমাম গাজ্জালী লিখিত বই সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকার তথা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ মুসলমানদের একটি অন্যতম ধর্মীয় কর্তব্য! হক্কানী ওলামায়ে কেরাম ও মুসলিম ধর্মতত্ত্ব বিদগণ বিভিন্ন উপায়ে এই আদেশ ও নিষেধের উপর আমল করিতেছেন। তাছাড়া দাওয়াত ও তাবলীগের নামে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে উহার উপর আমল হয়েছে।
সাধারণভাবে মনে করা হয়- মানুষকে সত্য, কল্যাণ ও দ্বীনের পথে আহ্বান করার নামই “সৎ কাজের আদেশ” এবং পাপ, অকল্যাণ ও গোমরাহীর পথ থেকে বিরত থাকতে বলার নামই “অসৎ কাজের নিষেধ”। অথচ ইসলামের এই মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ আমলটির আরো কোন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আছে কিনা এবং এই কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা ও দিক নির্দেশনা আছে কিনা, এই বিষয়ে আমাদের সকলের ধারণা অত্যন্ত সীমিত। সর্বকালের সেরা মুসলিম দার্শনিক হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী (রহঃ) “আমর বিল মারুফ ও নfহী আনিল মুনকার” শীর্ষক কিতাবে এসব বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করিয়াছেন।
“সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ” এর উপর আমল করার যোগ্য ব্যক্তিকে এই কাজের ক্ষেত্রে কি কি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া আবশ্যক, এই কাজের ক্ষেত্র ও সীমা কতটুকু, কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে এই কাজ ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ – ইত্যাদি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রশ্নের প্রামাণিক জবাবসম্বলিত এই কিতাবটি ইমাম গায্যালীর এক অমূল্য অবদান। এই বিষয়ের উপর কোরআন-হাদীসের দলীলসহ এমন যুক্তিপূর্ণ ও বিশ্লেষণাত্মক কিতাব ইমাম গায্যালীর আগে বা পরে অপর কেহ রচনা করিয়াছে বলিয়া আমাদের জানা নাই।
সুতরাং কোন প্রকার অতিশয়োক্তি না করিয়াই বলা চলে- সংশ্লিষ্ট প্রঙ্গের উপর ইহাই সর্বকালের সেরা কিতাব! ইতিপূর্বে ভারতের প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা নামীদ আল ওয়াজেদী মূল শীরোনামে এই কিতাবটির উর্দু তরজমা করেন। আমরা উর্দু হইতে বাংলায় তরজমা করিয়া কিতাবটির নাম দিয়াছি “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ”।
এমন একটি মূল্যবান কিতাবের বঙ্গানুবাদ বাংলাদেশী পাঠকদের হাতে তুলিয়া দিতে পারিয়া আমরা আল্লাহ পাকের অশেষ শোকর আদায় করিতেছি! আল্লাহ পাক আমাদের এই মেহনতকে কবুল করুন এবং কিতাবটিকে আমার জন্য আমার মাতাপিতা, পীর-উস্তাদ ও সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য নাজাতের উসিলা করিয়া দিন! আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন!
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ইসলামের একটি অন্যতম আমল! এই আমলের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্যই পৃথিবীতে আম্বিয়া আলাইহিমুসসালামগণের আগমন ঘটিয়াছিল! তাঁহারা আমরে বিল মা’রূফ ও নেহী আনিল মুনকার তথা “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ” এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের বিধান মানুষের নিকট পৌঁছাইয়া দিয়াছেন।
পৃথিবীতে নবীগণের আগমনের ধারা বন্ধ হইয়া যাওয়ার পর এই দায়িত্ব ওলামায়ে কেরামের উপর অর্পিত হইয়াছে! মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমানের প্রশ্নে এই আমলের আবশ্যকতা কতটা গুরুত্ববহ এই প্রসঙ্গে কেবল এতটুকু বলাই যথেষ্ট হইতে পারে যে, মানুষ যদি অবহেলা বশে এই আমল পরিত্যাগ করে, তবে দুনিয়াতে নবীগণের আগমনের উদ্দেশ্য ব্যহত হইয়া দ্বীনের ভিত্তি দুর্বল হইয়া পড়িবে এবং সমাজ জীবনের প্রতিটি স্তরে চরম অবক্ষয় ও গোমরাহী ছড়াইয়া পড়িবে।
দ্বীনের এই আহাম ও গুরুত্বপূর্ণ আমলের অনুপস্থিতির কারণে মানুষ ক্রমে আল্লাহর বিধান হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পাপাচার-অনাচার ও ফেত্না-ফাসাদের কঠিন তমসায় আচ্ছন্ন হইয়া পড়িবে এবং এক পর্যায়ে মানুষের অপরাধ অনুভূতি লোপ পাইয়া এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হইবে যে, মানুষ আল্লাহ পাকের অসংখ্য নাফরমানী করিবার পরও উহাকে কোন অপরাধই মনে করিবে না।
বর্তমান সময়ে সম্ভবতঃ আমাদের সেই আশংকাই বাস্তবে প্রমাণিত হইতেছে! দ্বীনের এই বুনিয়াদী আমল সম্পর্কে মানুষের ধারণা ক্রমেই লোপ পাইতেছে এবং কালক্রমে মানুষ ইহার আমল একেবারেই পরিত্যাগ করিতে বসিয়াছে! মানুষ এখন সৃষ্টিকর্তা খালেকের বন্দেগী ত্যাগ করিয়া মানুষেরই গোলামী করিতে শুরু করিয়াছে! দ্বীনের ছহী সমঝ ও আমল হইতে দূরে সরিয়া পড়ার কারণেই মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি এখন চতুস্পদ জন্তুর নিকৃষ্টতাকেও হার মানাইতেছে।
ভূ-পৃষ্ঠে এমন সত্যিকার ঈমানদার নিতান্ত দুর্লভ হইয়া পড়িতেছে, যাহারা সব রকম বাঁধা-বিপত্তি ও প্রতিকুলতা উপেক্ষা করিয়া আল্লাহ পাকের বিধানের উপর কায়েম থাকিতে সচেষ্ট হইবে। এহেন নাজুক সময়ে যাহারা সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে দ্বীনের হাল ধরিয়া মানুষের মাঝে আবারো নবীওয়ালা আমল জারীর মেহনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করিবে, তাহারা আল্লাহ পাকের পক্ষ হইতে মহান পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করিবে।
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের মেহনত তথা আমরে বিল মা’রূফ ও নেহী আনিল মুনকারের আমলটি অত্যন্ত ব্যাপক ও তাৎপর্যবহ! আমরা এই বিষয়টিকে চারিটি পৃথক পরিচ্ছেদে আলোচনা করার প্রয়াস পাইব।
কালামে পাকে এরশাদ হইয়াছে- “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিৎ যাহারা আহ্বান জানাইবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দিবে ভাল কাজের এবং বারণ করিবে অন্যায় কাজ হইতে, আর তাহারাই হইল সফলকাম। (সূরা আল ইমরানঃ আয়াত ১০৪ )
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা “সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ” এর উপর আমল করা মানুষের জন্য আবশ্যক হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়! আয়াতের বিবরণে আরো যেই কয়টি বিষয় প্রমাণিত হয় তাহা হইল, মানুষের কামিয়াবী ও সাফল্যকে বিশেষভাবে এই আমলের সহিত যুক্ত করিয়া বলা হইয়াছে, (তাহারাই হইল সফলকাম)। দ্বিতীয়তঃ এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট জানা গেল যে, “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ” এর আমলটি ফরজে কেফায়া; ফরজে আইন নহে।
মুসলমানদের একটি জামায়াত যদি এই আমল করে তবে অবশিষ্টগণ এই দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি পাইবে! কেননা, আয়াতে এইরূপ বলা হয় নাই যে, তোমরা সকলেই এই কাজ করিতে হইবে! বরং বলা হইয়াছে, তোমাদের মধ্য হইতে একদল মানুষের এই দায়িত্ব পালন করা কর্তব্য! অবশ্য এই কথা বলা হইয়াছে যে, সফলতা বিশেষভাবে সেইসব ব্যক্তিদেরই প্রাপ্য যাহারা এই দায়িত্ব পালন করিবে।