বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; মিজানুর রহমান আজহারী লিখিত বই ম্যাসেজ এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
‘দুআ’ মাত্র দুই অক্ষরের একটি শব্দ। কিন্তু শব্দটির ক্ষমতার ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি পরিমাপ করা সত্যিই বড্ড কঠিন। এ যেন মালিক ও দাসের মধ্যে চাওয়া-পাওয়ার সেতু নির্মাণকারী এক কারিগর। একজন ক্ষুদ্র দাস আরশে আজিমের মালিকের কাছে মিনতি করছে, ভিক্ষা মাঙছে আর মনিব উজাড় করে সব দিয়ে দিচ্ছেন—এ যেন ওয়ান টু ওয়ান বোঝাপড়া। কী দারুণ একটা ব্যাপার! সুবহানাল্লাহ।
দুআর মাধ্যমে আমরা মূলত আল্লাহর প্রতিটি নাম ও বিশেষত্বের স্বীকৃতি দেয়। আমরা স্বীকৃতি দেয়, তিনি আমাদের স্রষ্টা আর আমরা তাঁর অনুগত দাস। আমাদের লালন-পালন, নিয়ন্ত্রণ সবকিছুই তাঁর হাতে। আমাদের যাবতীয় কার্যকলাপ তিনি শুনছেন, দেখছেন। তিনি সর্বশক্তিমান। সবকিছুর ওপর তিনি ক্ষমতাবান। দুআ মানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ, উপাস্য হিসেবে তাঁর একক অধিকারের স্বীকৃতি।
দুআ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বিশেষ উপহার। দুআ করা এবং দুআ চাওয়া দুটোই সুন্নাহ। দুআ একটি মহৎ ইবাদতও বটে। বিশ্বনবী বলেন—’আল্লাহর দৃষ্টিতে দোয়ার চেয়ে মহৎ কিছু নেই।’ (সহিহ বুখারি : ৫৩৯২)
একনিষ্ঠ মনে দুআ করলে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। কারণ, তিনি বড়ই দয়ালু ও লজ্জাশীল। বান্দা যখন কাতর হৃদয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চায়, তখন তিনি বান্দাকে খালি হাতে ফেরাতে লজ্জাবোধ করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।’ (সূরা মুমিন : ৬০)
(হে রাসূল) যখন বান্দারা তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, তখন বলে দিয়ো–আমি তো কাছেই আছি। কেউ আমাকে ডাকলে আমি তার ডাকে সাড়া দিই।’ (সূরা বাকারা : ১৮৬)
বিশ্বনবী বলেন—আল্লাহ খুবই লজ্জাশীল। বান্দা যখন হাত তুলে দুআ করে, তখন আল্লাহ তার হাত দুটোকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ : ১৪৮৮)
দোয়া সকল ইবাদতের মূল নির্যাস। প্রিয়নবি সঃ বলেন- ‘দুআ ইবাদতের মগজ।’ (আবু দাউদ : ১৪৭৯)
আপনি নামাজ পড়লেন, রোজা রাখলেন, হজ করলেন, কিন্তু দুআ করলেন না, তার মানে—আপনি ইবাদতের নির্যাসটাই হারালেন। কেউ যদি বাকি সব ইবাদত করে, কিন্তু দুআ না করে, তাহলে সে অহংকারী বলেই সাব্যস্ত হবে।
‘যে আল্লাহকে ডাকে না, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন।’ (সহীহ বুখারী : ২৪১৮)
একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দুআকে গোটা দ্বীনের সঙ্গে তুলনা করেছেন— “তিনি চিরজীবী। তিনি ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য নয়। দ্বীনকে তাঁর প্রতি নিবেদিত করে কেবল তাঁকেই ডাকো।’ (সূরা মুমিন : ৬৫)
তাই বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে। আল্লাহর কাছে যত বেশি চাওয়া হয়, তিনি তত বেশি খুশি হন। কিন্তু এই দুআ করতে হবে দুআর মতোই, হেঁয়ালিপনা কিংবা তাড়াহুড়ো করে নয় ।
দুআ একটা আর্ট বা শিল্প। একে রপ্ত করতে হয়, আত্মস্থ করতে হয়। সব কাজের মধ্যে যেমন ফার্স্ট-ক্লাস, সেকেন্ড-ক্লাস, থার্ড ক্লাস আছে, তেমনি দুআর মধ্যেও ফার্স্ট-ক্লাস, সেকেন্ড-ক্লাস, থার্ড ক্লাস আছে। কেউ ফার্স্ট-ক্লাস দুআ করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করে নেন। আর থার্ড ক্লাস দুআ করলে সেই দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমন অনেক দুআকারী আছে যাদের দুআয় কোনো আবেগ ও ভাবাবেগ থাকে না। এ যেন রোবটিক দুআ-ফাঁপা, নিষ্প্রাণ: দুআ করার জন্য দুআ। এ রকম দুআ আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না।
দুআ করতে হবে আবেগ দিয়ে, যে আবেগ চোখের জলের বাঁধ ভেঙে দেবে। হৃদয়কে করবে নরম, উর্বর। বান্দার চোখের পানি আল্লাহ খুব পছন্দ করেন । অনুতপ্ত বান্দার চোখের পানি নাকের ডগা বেয়ে মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহ তায়ালা তার দুআ কবুল করে নেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। দয়ার নবী সঃ বলেন-
“দুই ধরনের ফোঁটা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এক. অনুতপ্ত বান্দার চোখের অশ্রুর ফোঁটা; দুই. জিহাদের ময়দানে শহীদের রক্তের ফোঁটা।’ (জামে আত-তিরমিজি : ১৬৬৯)
দুআ মুমিনের অসাধারণ এক হাতিয়ার। দুনিয়ার সবকিছুর কারিশমা যেখানে শেষ, দুআর কারিশমা সেখান থেকেই শুরু। সব ক্ষমতা যেখানে অকার্যকর, দুআর ক্ষমতা সেখানেই কার্যকর। দুআর মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর কাছে ধরনা দেওয়া হয়। আর আল্লাহর দরবারে ‘না’ বলতে কিছু নেই; আছে শুধু ‘হ্যাঁ’। দুআর অসাধারণ কিছু শক্তি জেনে নেওয়া যাক।
দুআ ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার : মানুষের তাকদিরে সাধারণত কোনো পরিবর্তন হয় না। মহাবিশ্ব সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে আল্লাহ আমাদের তাকদির লিখে রেখেছেন, কিন্তু দুআর বদৌলতে তাকদিরও পরিবর্তন হতে পারে।