যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি pdf free download – মেজর ডালিম
আইয়ূব খানের ক্ষমতা দখল পাকিস্তানের জন্য অবিসংবাদিত বিপর্যয় ডেকে আনল। মার্শাল’ল জারি করার ফলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের অবক্ষয় ঘটল। বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক ভারতে গণতন্ত্র যখন সুপ্রতিষ্ঠিত তখন পাকিস্তানের সামরিক শাসন জারি হওয়ায় বিশ্ব পরিসরে উপমহাদেশের মুসলমানদের ইমেজ বিনষ্ট হয়। সরকার রাজনীতিকদেরকে অর্ডিন্যান্স বলে অপরাধী ঘোষণা ঘোষণা করে জাতীয় রাজনীতিকে কলঙ্কিত করেছিল। মানুষের মৌলিক অধিকার এবং সার্বজনীন ভোটাধিকার হরণ করে তিনি দেশের মানুষের উপর একনায়কত্ব চাপিয়ে দেন।
যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি pdf
আইয়ূবের বুনিয়াদি গণতন্ত্র দেশে দুর্নীতির প্রসার ঘটিয়েছিল। পাকিস্তানের ফেডারেল কাঠামো ভেঙ্গে কেন্দ্রকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টায় পাকিস্তানের মূল পরিকল্পনার উপর আঘাত হানা হয়। আইয়ূব পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে একটা বৈষম্যের সৃষ্টি করেছিলেন। বাঙ্গালী মুসলমানদের হিন্দু ভাবাপন্ন চির পরাধীন, সন্দেহপ্রবন বলে আখ্যায়িত করে তিনি দুই অংশের মধ্যকার সংহতি বিনষ্ট করেছিলেন। করাচী থেকে ফেডারেল ক্যাপিটাল পাঞ্জাবে স্থানান্তরিত করে করাচীর জনগণের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মনেও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। বুনিয়াদি গণতন্ত্র প্রথা প্রবর্তন করে তিনি আজীবন শাসন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন বলে মনে করেছিলেন।
এ প্রথা প্রবর্তনের সময় পূর্ব পাকিস্তানের ৯জন নেতা আইয়ূব খানের এই অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরোধিতা করে সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়েছিলেন। তাদের এই সাহসী পদক্ষেপ বুদ্ধিজীবি মহলে সমাদৃত হয়েছিল। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপ সময়োপযোগী হওয়া অপরিহার্য। এই সময়ের হেরফের একটি আন্দোলনকে বহু বছর পিছনে ঠেলে দিতে পারে। সে সময় সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ছিল আইয়ূব সরকারের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী জাতির ঐক্য গড়ে তোলা। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন। এ সুযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই জেনারেল আইয়ূব জাতির মাথায় বুনিয়াদি গণতন্ত্রের ভূত চাপিয়ে দিতে সক্ষম হন।
কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সত্য হল এই যে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। সে এক নিজস্ব ধারায় প্রবাহিত হয়ে চলে এবং সে গতি তার অমোঘ। বার বার করে ক্ষমতালোভী নেতৃত্ব এই সত্যটাকেই অস্বীকার করে থাকেন। মোনেম খানকে আইয়ূব খান বাংলাদেশে তার সবচেয়ে অনুগত এবং বিশ্বাসভাজন ব্যক্তি হিসাবে বেছে নিয়ে তাকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগ করেন। তার দ্বারা বাংলা সংস্কৃতি এবং বাঙ্গালীর ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালানো হয়। তার আমলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র অঙ্গনে দুর্নীতি প্রবেশ করে। কিছু সংখ্যক ছাত্রনেতাকে তিনি ঠিকই বশীভূত করতে পেরেছিলেন। কিন্তু এর পরিণতি মোনায়েমের জন্য সুখকর হয়নি। তার এই কূটকৌশলের বিরুদ্ধে ছাত্রদের মধ্যে দলমত নির্বিশেষে ঐক্য স্থাপিত হয়েছিল।