Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

হাদিস সংকলনের ইতিহাস pdf

হাদিস সংকলনের ইতিহাস pdf Description

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহিম লিখিত বই হাদিস সংকলনের ইতিহাস এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।

যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর উপর। কোরআন ও হাদীস মুসলিম মিল্লাতের এক অমুল্য সম্পদ, ইসলামী শরিয়তের অন্যতম অপরিহার্য উৎস এবং ইসলামী জীবন বিধানের মূল ভিত্তি। কোরআন মজীদ যেখানে জীবন ব্যবস্থার মুলনীতি পেশ করে, হাদীস সেখানে এই মুলনীতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ এবং তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা বলে দেয়। কোরআন ইসলামের প্রদীপ, হাদীস তার বিচ্ছুরিত আলো।

ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানে কোরআন হল হৃদপিন্ড আর হাদীস হৃৎপিন্ডের সাথে সংযুক্ত ধমনী। ইসলামী জ্ঞানের বিশাল ক্ষেত্রে এই হৃৎপিন্ড ও ধমনী প্রতিনিয়ত তাজা তপ্ত শোনিত ধারা প্রবাহিত করে এর অংগ প্রত্যংগকে অব্যাহতভাবে সতেজ ও সক্রিয় রাখে। তেমনি হাদীস মহানবী (সা.) এর পবিত্র জীবন চরিত, কর্মনীতি ও আদর্শ, তাঁর কথা ও কাজ, হেদায়াত ও উপদেশের বিস্তারিত বিবরণ। এ জন্যই ইসলামী জীবন বিধানে কোরআনে হাকীমের পরপরই হাদীসের স্থান।

সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানুষের মনের মানসপটে যেসব জীবন জিজ্ঞাসা উকি দিয়েছে তার উত্তর মানুষ খুজেছে ধর্মে, দর্শনে, সভ্যতায়। মানুষ জানতে চেয়েছে বিশ্ব সৃষ্টির উৎস ও তার পরিনতি। তারা প্রশ্ন করেছে: মৃত্যুই কি মানব জীবনের পরিনতি? জীবনাবসান যদি জীবনের পরিসমাপ্তি না হয় তাহলে তার স্বরূপ কি? পরকালের কৃতকার্যতার জন্য ইহকালের কোন ধরণের জীবন পদ্ধতি প্রয়োজন? এসব প্রশ্নের উত্তর মানুষের বিবেক বুদ্ধিকে করেছে সর্বক্ষণ আলোড়িত।

যুগে যুগে দার্শনিকগণ এসব প্রশ্নের আলোচনা সমালোচনা করেছেন কিন্তু মানব সমাজকে সঠিক পথ নির্দেশনা দিতে পারেননি। তাই দেখে বিশ্ববিখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইম্যানুয়েল ক্যান্ট তাঁর বইতে যুক্তি বা দর্শনের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। “পঞ্চ ইন্দ্রিয় মানুষের জ্ঞান আহরণের প্রাথমিক বাহন হিসেবে গণ্য। যদিও ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে মানুষ যুগে যুগে সত্যের অন্বেষণে সচেষ্ট হয়েছে, প্রত্যাশা করেছে জীবন জিজ্ঞাসার উত্তর। কিন্তু ইন্দ্ৰিয়লব্ধ জ্ঞান মানুষকে সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম হয়নি, হতে পারেনি জ্ঞানার্জনের একক বাহন। তাই আমরা দেখতে পাই প্রসিদ্ধ দার্শনিকগণ ইন্দ্রিয়কে মানুষের জ্ঞান আহরণের দুর্বল বাহন বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সপ্তদশ শতাব্দির নামজাদা দার্শনিক মিসেল ডি মন্টেগা বলেন মানুষের জ্ঞান অত্যন্ত অপরিপক্ক, আর ইন্দ্রিয় অনিশ্চিত ও ভ্রান্ত। ইন্দ্ৰিয় লব্ধ জ্ঞান সঠিক কিনা তা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারিনা। কারণ ইন্দ্রিয় শুধু মানুষের কাছে তার প্রকৃতি ও অবস্থানানুযায়ী ইহজাগতিক অবস্থা প্রকাশ করে। পঞ্চ ইন্দ্রিয় মানুষকে তার দৈনন্দিন জীবন যাপনে সাহায্য করে কিন্তু বাস্তব নিগুঢ়তম রহস্য উন্মোচনে অসমর্থ। তাই পঞ্চ ইন্দ্রিয় মানুষকে পরকাল সম্বন্ধে কোনো সঠিক উত্তর দিতে অক্ষম ও সৃষ্টি রহস্য উদ্ঘাটনে অপারগ।

জ্ঞানার্জনের আর একটি বাহন হচ্ছে নবী-রাসুলদের নিকট প্রেরিত স্রষ্টার বাণী বা ওহী। যুগে যুগে প্রেরিত পুরুষগণ মানবজাতিকে শুনিয়েছেন মুক্তির বাণী। পয়গাম্বরগণ আল্লাহ প্রদত্ত ওহীর মারফত মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে অন্ধকার থেকে নিয়ে এসেছেন আলোর পথে। তাঁরা যে বাণী প্রচার করেছেন, তা তাদের নিজস্ব ছিল না এবং তাকে তাঁদের অভিমত বলেও দাবী করেনি, যেমনটি করেছেন দার্শনিকগণ।

তাঁদের একমাত্র দাবী, তাঁরাই হচ্ছেন নবী-রাসুল, সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে একমাত্র সেতু বন্ধন। আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত বাণী বা ওহীই হচ্ছে তাদের জ্ঞানের একমাত্র উৎস। তাঁরা আল্লাহ তায়ালার অভ্রান্ত বাণী প্রচার করেছেন। মানুষের মুক্তির পথ নির্দেশিকা হিসেবে যা দিয়েছেন তা মানুষের সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর। তাঁদের এ দাবীর যথার্থতা ছিল প্রশ্নাতীত। কারণ তাঁরা ছিলেন সৎ, সত্যবাদি ও নিস্কলুস চরিত্রের অধিকারী। তাঁদের ব্যক্তিগত, সামাজিক আচরণ ছিল সমকালীন মানুষের সমালোচনার উর্ধ্বে।

ঘোরতর দুশমনও তাঁদের ব্যক্তি চরিত্র সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করেনি। সামাজিকভাবে স্বীকৃত সৎ, সত্যবাদী, নিষ্ঠাবান মানুষ কখনো মিথ্যাচারী হতে পারেনা। তাছাড়া তাঁরা কখনো তাদের প্রচারিত বাণী তাদের নিজস্ব বলে দাবী করেননি। তাই আমরা কোরআন মজিদে দেখতে পাই “আমি তোমাদের মত মানুষ, ব্যতিক্রম শুধু এই যে আমার নিকট আলাহর বাণী প্রেরিত হয়।” (সুরা কাহাফ, আয়াত-১১0 )

বর্ণিত আয়াত থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারি যে, পয়গম্বর তাঁর বাণীর ব্যাপারে নিজস্ব কোন কৃতিত্বের দাবীদার নন। নেই কোন আত্মম্ভরিতা, কোন আত্মশ্লাঘা বা আত্মপ্রশস্তি। স্রষ্টার বাণী ওহীর সত্যতার অকাট্য প্রমাণ এর চেয়ে বেশী আর কী হতে পারে?

মানব সৃষ্টির আদিকাল থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ পৃথিবীতে মানব জাতির হেদায়াতের জন্য লাখো লাখো নবী- রাসুলগণকে তাদের জীবনাদর্শ বা বিধি বিধান সহ তাঁর বার্তা পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে মাজিদে তাই বলেছেন- “প্রত্যেক জাতির নিকট সঠিক পথ প্রদর্শক এসেছে।” (সুরা ফাতির, আয়াত-২৪)

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “আমি প্রত্যেক জাতিকে তার পথ প্রদর্শক দিয়েছি।” (সুরা হিজর, আয়াত-১০) এসব পথ প্রদর্শক নবী রাসুলগণ তাদের জাতির নিকট আল্লাহর বাণী প্রচার করেছেন। তাদের জীবদ্ধশায় তাদের প্রচারিত এসব বাণী ছিল অন্তবর্তীকালীন জীবন ব্যবস্থা। তারা তাদের উম্মতকে পরবর্তিকালে শেষ রাসূল-নবী মোহাম্মদ মোস্তফা (সা:) এর আগমন ও তাঁর মাধ্যমে চূড়ান্ত বাণী প্রেরণের ভবিষ্যত বাণী করে গেছেন। কিন্তু তাদের প্রচারিত বাণীর সংরক্ষণের কোন অঙ্গিকার করেননি; যা করা হয়েছিল আল্লাহ তায়ালার শেষ প্রেরিত বাণী কোরআনের সুরক্ষার জন্য।

সেজন্য সে সব নবীদের বাণী বিশুদ্ধ থাকেনি। তাতে বহু অনাহুত আবর্জনা সংক্রমিত হয়েছে। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন- “নিশ্চয়ই আমি নাজিল করেছি কোরআন আর এর হিফাজতকারী নিশ্চয়ই আমি।” (সুরা আল হিজর, আয়াত-৯)। আল্লাহ তায়ালা তাঁর ওয়াদা পরিপূর্ণভাবে পালন করেছেন এবং তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী রাসূলে খোদা (সা:) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তা কার্যকর করেছেন।

আমার এ বইতে কোরআন সংরক্ষণের পরিকল্পনা রাসুল (সা:) এবং পরবর্তীকালে মুসলমান রাষ্ট্র ও সমাজ তা কিভাবে বাস্তবায়ন করেছে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে রাসূলে খোদার নিকট কাফেরদের মোজেজা বা অতি প্রাকৃতিক কর্মকান্ড প্রদর্শনের আবদারের বিপরীতে কোরআনে মজিদকে সে মোজেজা হিসাবে রাসূল কর্তৃক দাবী করা এবং এ বাণীর মত করে একটি সুরা রচনা করার আহবান আজ পর্যন্ত কোন অমুসলিম বিদ্যান ব্যক্তি তা প্রকাশ করতে পারেনি।

কোরআন পৃথিবীতে অবিশ্বাস্য মোজেজা হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা সুরা মুদ্দাসিরে বর্ণিত ১৯ সংখ্যাকে কোরান মজিদ বুননের মাপকাঠি হিসেবে বর্ণনা করে মানব জাতিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, কোরআন মানুষের সৃষ্টি নয়। তা মহাশক্তিধর আল্লাহর বাণী ছাড়া আর কিছুই নয়।

ইসলামী আইনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি মূল উৎস হল, আল কোরআন ও হাদীসে রাসূল (সা.)। কোরআন হচ্ছে ঐ সব আল্লাহর বানী বা ওহী যা আক্ষরিক ভাবে জিব্রিল মারফত আল্লাহ কর্তৃক তাঁর প্রেরিত রাসুল মোহাম্মদ (সা.) এর নিকট পাঠিয়েছেন। তার আক্ষরিক ভাবে সংরক্ষণের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) দায়বদ্ধ। এ রকম প্রেরিত বাণীকে ইসলামী পরিভাষায় ওহীয়ে মাতলু বলা হয়ে থাকে। অপরদিকে হাদীস হচ্ছে মহানবীর বাণী। তাঁর আচরিত, অনুমোদিত ও সমর্থিত কার্যাবলী যা তিনি রাসূল পদের দায়িত্ব পালন উপলক্ষে সম্পাদন করেছেন।

এসব বাণী ও আচরিত, অনুমোদিত, সমর্থিত কার্যাবলীকে ওহীয়ে গায়েরে মাতলু বলা হয়। এ ওহী দ্বারা প্রাপ্ত মূল ভাবটি রাসূল (সা.) তাঁর নিজস্ব ভাষায় প্রকাশ করার অধিকার আল্লাহ তায়ালা তাঁকে দিয়েছিলেন। রাসূলের এসব বাণী সংরক্ষণের দায় আল্লাহ তা’য়ালা গ্রহণ করেনি। তাই এর সংরক্ষণের দায় দায়িত্ব বর্তায় মুসলমান রাষ্ট্র ও সমাজের উপর, যা তারা বিশ্বস্ততার সাথে পালনে স্বচেষ্ট হন। তাদের এ সজ্ঞান প্রচেষ্টা বহুলাংশে বিশেষভাবে কামিয়াব হয়। আমার বইটিতে আমি তাদের প্রচেষ্টায় হাদীস সংকলন ও সম্পাদন বিষয় আলোচনা করেছি। জানিনা আমি আমার প্রচেষ্টায় কতদুর কামিয়াব হয়েছি।

Rate the Post

Categories

Writers

Popular Books

Scroll to Top