বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ লিখিত বই সিক্রেট মিশন মোসাদ স্টোরিজ এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।
অন্যধারার ফারুক ভাই যখন খুব করে ধরলেন একটি বই দিতেই হবে, তখন চিন্তা করছিলাম, কোন বইটি আমি এ প্রকাশনীতে দিতে পারি। দুটো অলিখিত বই মাথায় ঘুরছিল, “মক্কা-মদিনা- জেরুজালেম” আর “মোসাদ স্টোরিজ”। শেষমেশ ঠিক করলাম, দ্বিতীয়টাই দেব। তবে বইয়ের নাম “মোসাদ স্টোরিজ” দেব না। নাম হবে ‘সিক্রেট মিশনস’, যার এবারকার পর্ব মোসাদকে নিয়ে। মনে ক্ষীণ আশা, হয়তো এটা সিরিজ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে, আর একেকটি বই হবে একেকটি গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় আর মিশন নিয়ে। হয়তো কোনো কোনো সংস্থা নিয়ে একাধিক বইও হতে পারে! কে জানে?
তবে প্রথম বই হিসেবে মোসাদকে বাছাই করার কোনো বিকল্প নেই। ‘মোসাদ’ মানেই রহস্যে ঘেরা এক সংস্থা, যাদের মিশনগুলো হয় নির্দয় আর দুর্ধর্ষ। অথচ তাদের ব্যাপারে জানাশোনা খুবই কম। নানা জনের জবানি আর লিক হওয়া খবরাখবর থেকে যতটুকু জানতে পারা যায়, তা থেকেই লিখতে হয় মোসাদকে নিয়ে। ভাগ্য ভালো, মাইকেল বার-জোহারের একটি বই আছে, যাতে দুজন লেখক ঘেঁটে খুঁটে ২০১০-২০১১ সাল পর্যন্ত নানা মিশন নিয়ে লিখে রেখেছেন। সেগুলো থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যায়, আর ইন্টারনেট ও অন্যান্য কিছু বই আছে। এগুলোর সাহায্য নিয়ে নিজের মতো করে মোসাদের জন্ম থেকে শুরু করে এই নব্য ‘রামসাদ’ বাছাই পর্যন্ত নানা কাহিনী লিখে ফেললাম।
‘রামসাদ’ শব্দটা অপরিচিত ঠেকছে? মোসাদের প্রধানকে ডাকা হয় ‘রামসাদ’। এরকম টুকটাক অনেক তথ্যই বইটি পড়লে জানা যাবে। এই যেমন ধরুন, এত বড় গোয়েন্দা সংস্থা, অথচ মোসাদের হেডকোয়ার্টার যে আসলে কোথায়, কেউ নিশ্চিত জানে না!
বইতে অনেকগুলো অংশেই মোসাদ প্রতিষ্ঠার কার্যকারণ ব্যখ্যা করতে গিয়ে কিংবা মিশন ডিটেইলস দিতে গিয়ে ইসরাইল অর্থাৎ মোসাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়েছে, যেন পাঠক ওদিকের ভাবনা অনুভব করতে পারেন। একটা ঘটনাকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে হলে, কর্মসম্পাদকের দৃষ্টিতে দেখাটা জরুরি বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে। আর বিভিন্ন চরিত্র আর স্থান কল্পনা করতে যেন সুবিধা হয়, সেজন্য বইটিতে বেশ কিছু ছবি যোগ করা হয়েছে। বইটি পড়ে পাঠক নতুন কিছু জানবেন, এটাই প্রত্যাশা।
মোসাদ। পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় গুপ্তচর সংগঠন। যাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে জানা যায় না তেমন কিছুই। বিভিন্ন মানুষের বয়ানে মাঝে-সাঝে হয়তোবা শোনা যায়। কখনোবা কালেভদ্রে ফাঁস হয়ে যায় নির্মম কোনো ঘটনার পেছনে মোসাদের কলকাঠি নাড়ার কথা। কিন্তু এর পরিমাণ নিতান্তই অল্প।
মানুষ অজানাকে এমনিতেই ভয় পায়। তার ওপর মোসাদকে নিয়ে টুকটাক যা জানা গেছে, তার পরতে পরতে প্রচণ্ড নির্মমতা। দুর্ধর্ষ ও নিষ্ঠুর সব চরিত্র বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে একের পর ভয়ংকর হামলা করছে। ঢুকে যাচ্ছে সরকারের ওপর মহলের রন্ধ্রের ভেতর। অনেকদিন পর কিংবদন্তীর মতো করে জানা যায় এসব গল্প। চাঁদের হালকা আলো যেমন রাতের অন্ধকারের রহস্যময়তা আরও বাড়িয়ে দেয়, ভয় ধরিয়ে দেয় মানুষের বুকে, মোসাদকে নিয়ে এসব গল্পও একই ভূমিকা রেখে চলেছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ তার সিক্রেট মিশনস: মোসাদ স্টোরিজ বইতে এই রহস্যময়তার পর্দা যথাসম্ভব মেলে ধরতে চেয়েছেন। মোসাদ প্রতিষ্ঠা, এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্র, বিভিন্ন দেশে তাদের অপারেশন ইত্যাদি উঠে এসেছে তার লেখায়। মোট ছয়টি অধ্যায় আছে বইতে। সাথে আছে ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্থান-কাল- পাত্রের ছবি।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের লেখা বেশ স্বাদু। পড়তে আরাম। ক্লান্তি আসে না। এই বইটি বেশ তথ্যবহুল। কিন্তু পড়ার সময় লেখক জোর করে তথ্য গেলাতে চাইছেন বলে মনে হবে না একদমই। বই সম্পাদনা করা বেশ পরিশ্রমের কাজ। কিন্তু এই বই সম্পাদনা করতে গিয়ে একবারও ক্লান্তি বা বিরক্তি বোধ হয়নি।
ইতিহাস, গুপ্তচর সংঘ বা মোসাদকে নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে, কিংবা নন- ফিকশন পড়তে যাদের ভাল লাগে, এই বই যে তাদের ভাল লাগবে, তা বলা বাহুল্য। যারা ফিকশনের পাঠক, আমার ধারণা এই বইটি পড়লে তারাও ইতিহাস ও নন-ফিকশন পড়ার আনন্দ অনুভব করতে পারবেন।
মোসাদ স্টোরিজ বইটি পাঠকের কাছে সমাদৃত হবে, এমনটাই আমার প্রত্যাশা। সেই সঙ্গে আশা রাখি, সিক্রেট মিশনস সিরিজের আরও পর্ব আসবে। সেসব বইতে উঠে আসবে অন্যান্য গুপ্তচর সংস্থার রোমহর্ষক সব গল্প। সেসব গল্পের অপেক্ষায়।