Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

রাসূলের চোখে দুনিয়া pdf

রাসূলের চোখে দুনিয়া pdf Info

রাসূলের চোখে দুনিয়া pdf Description

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ লিখিত বই রাসূলের চোখে দুনিয়া (কিতাবুয যুহদ) এর pdf ফাইল ডাউনলোড করতে নিচে দেওয়া DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন।

দুনিয়া এক রহস্য-ঘেরা জায়গা! এখানে মানুষ আসে। শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের সিঁড়ি বেয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে। তারপর হঠাৎ একদিন চলে যায়। কোত্থেকে এলো, কেন এলো, কোথায় গেলো—এসব প্রশ্ন প্রত্যেক মানুষের মনে বারবার উঁকি দেয়; কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা দুনিয়ার মোহ ও সুখ-ভোগের নেশার নিচে চাপা পড়ে থাকে।

দুনিয়ার সাথে মানুষের সম্পর্ক কী? মানুষ কেন এখানে আসে, আবার কেনই বা এখান থেকে চলে যায়? এখানে তার করণীয় কী? দুনিয়ার কতোটুকু অংশ গ্রহণীয়, আর কতোটুকু বর্জনীয়?—এসব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা মানুষের সূচনালগ্ন থেকেই নবি-রাসূল পাঠিয়েছেন। পক্ষান্তরে, কতিপয় দার্শনিকও নানাভাবে এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

তবে, অধিবিদ্যা (metaphysics)-এর এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে দার্শনিকদের একমাত্র ভিত্তি হলো ‘আন্দাজ-অনুমান ( speculation)’। বিপরীত দিকে, নবি-রাসূলদের জবাবের ভিত্তি হলো ওহি–নির্ভুলতম জ্ঞান।

দুনিয়া সম্পর্কে নবি-রাসূল, সাহাবি ও তাবিয়িদের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কী—তা নিয়ে হিজরি দ্বিতীয় শতকের খ্যাতিমান হাদীসবিশারদ ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটির নাম কিতাবু যুহদ। ‘যুহদ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘দুনিয়া-বিরাগ’। গ্রন্থটির নবি-রাসূল অংশে তিনি মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আদম, নূহ, ইবরাহীম, ইয়াকূব, ইউসুফ, আইয়ূব, ইউনুস, মূসা, দাউদ, সুলাইমান, ইয়াহ্ইয়া ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) প্রমুখ নবি-রাসুলের দুনিয়া সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।

বিষয়বস্তুর দিকে খেয়াল রেখে বাংলা অনুবাদে এ অংশের নাম দেওয়া হয়েছে রাসূলের চোখে দুনিয়া! ইন শা আল্লাহ, আমরা অচিরেই কিতাবুয যুহদ – এর বাদবাকি অংশ যথাক্রমে সাহাবিদের চোখে দুনিয়া ও তাবিয়িদের চোখে দুনিয়া শিরোনামে প্রকাশ করবো।

আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহিমাহুল্লাহ) সহ বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান হাদীসবিশারদ যুহদ বা দুনিয়া-বিরাগ-এর উপর গ্রন্থ রচনা করেছেন। তবে এসব গ্রন্থের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যুহদ-এর উপর লিখিত গ্রন্থাবলির মধ্যে ইমাম আহমাদ-এর লিখিত গ্রন্থটি সর্বোত্তম।

ড. মুহাম্মাদ জালাল শারাফ আরবের বিভিন্ন গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি থেকে সম্পাদনা করে ১৯৮১ সালে গ্রন্থটিকে কিতাবুয যুহদ শিরোনামে বৈরুতের দারুন নাহদাতিল আরাবিয়্যাহ থেকে প্রকাশ করেন। এর দু-বছর পর ১৯৮৩ সালে বৈরুতের আরেক প্রকাশনা সংস্থা দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ গ্রন্থটিকে আয-যুহৃদ শিরোনামে প্রকাশ করে। রাসূলের চোখে দুনিয়া প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে মূলত দারুন নাহ্দাতিল আরাবিয়্যাহ সংস্করণটি ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে কোথাও পাঠগত অস্পষ্টতা দেখা দিলে, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ সংস্করণের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়েছে! ‘রাসূলের চোখে দুনিয়া’ অংশে মূসা (আ.)-এর নুবুওয়াতপ্রাপ্তির ঘটনা নিয়ে সুদীর্ঘ ছয় পৃষ্ঠার একটি বিবরণ অনুবাদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে এ বর্ণনার বেশিরভাগ অংশই নেওয়া হয়েছে ইসরাঈলিয়াত থেকে; তেমনিভাবে দাউদ (আ.)-এর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একটি জঘন্য মনগড়া গল্পবিশেষ অনুবাদ করা হয়নি, কারণ মুফাসির ও মুহাদ্দিসদের অধিকাংশের মতে তা হলো কতিপয় বিকৃতরুচি ইয়াহূদি কর্তৃক উদ্ভাবিত নোংরা গল্পের অংশবিশেষ।

তাছাড়া নাহ্দা সংস্করণে লুকমান (আলাইহিস সালাম)-এর যুদ নিয়ে আলোচনা থাকলেও, তাঁর নুবুওয়াতের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক থাকায় আমাদের অনুবাদগ্রন্থে এ অংশটি রাখা হয়নি।

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর কিতাবুয যুহদ গ্রন্থে ধারাবাহিকভাবে হাদীস বর্ণনা করে গিয়েছেন! হাদীসের শিরোনাম ও ক্রমিক নম্বর দেননি! পাঠকদের পাঠ ও উদ্ধৃতির সুবিধার্থে আমরা বাংলা অনুবাদে হাদীসের শিরোনাম ও ক্রমিক নম্বর দিয়েছি! শিরোনাম চয়নে সংশ্লিষ্ট হাদীসের শব্দাবলিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও কোথাও মূলভাব তুলে আনা হয়েছে।

কাছাকাছি অর্থজ্ঞাপক যেসব হাদীস এ গ্রন্থের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সেগুলোকে “তুলনীয় হাদীস নং” শব্দগুচ্ছ দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন ২১৭ নং হাদীস শেষে লেখা হয়েছে—[তুলনীয়: হাদীস নং ৬৫; ১৫৮]। তার মানে হলো, ২১৭ নং হাদীসে যা বলা হয়েছে, তার অনুরূপ বক্তব্য এ গ্রন্থের ৬৫ ও ১৫৮ নং হাদীসেও বিদ্যমান।

আমাদের বর্তমান গ্রন্থটি আরবি থেকে বাংলা অনুবাদ হলেও নবি-রাসূলদের মুখনিঃসৃত বাণীসমূহের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে আরবি পাঠ ও তারপর বাংলা অনুবাদ দিয়েছি! বিশুদ্ধ উচ্চারণের স্বার্থে আরবি স্বরচিহ্নও যুক্ত করেছি! আরবি শব্দাবলির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণ (transliteration)-এর ক্ষেত্রে আরবি ভাষার মূল স্বরের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে! যেমন—তাসবীহ, আবু, ইয়াহুদি প্রভৃতি বানানে প্রচলিত হ্রস্ব ই কার ও হ্রস্ব উ কার ব্যবহার না করে দীর্ঘ ঈ কার ও দীর্ঘ ঊ কার ব্যবহার করা হয়েছে! কারণ মূল আরবিতে এসব স্থানে দীর্ঘ স্বর রয়েছে।

তবে যেসব ক্ষেত্রে আরবি বিশুদ্ধ বানান ও প্রচলিত বাংলা বানানের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি! সেখানে এমন এক বানান ব্যবহার করা হয়েছে—যা মূল স্বরের কাছাকাছি, আবার বাংলা ভাষাভাষী লোকদের নিকট সম্পূর্ণ অপরিচিত নয়! যেমন বিশুদ্ধ আরবি বানান ‘ওয়াহ্ইয়ু’ এবং প্রচলিত বাংলা বানান ‘অহি’–এর কোনোটি ব্যবহার না করে, ‘ওহি’ ব্যবহার করা হয়েছে! আমাদের বিশ্বাস, পাঠকের বোধগম্যতাকে সামনে রেখে আরবি শব্দাবলিকে প্রতিবর্ণীকরণের বিজ্ঞানসম্মত নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে বর্তমান বানান-সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।

গ্রন্থটি মূলত হাদীস-সংক্রান্ত। এতে লেখকের নিজস্ব কোনো অভিমত ব্যক্ত করা হয়নি! শুধু ধারাবাহিকভাবে নবি-রাসূল, সাহাবি ও তাবিয়িদের বক্তব্য বর্ণনা করা হয়েছে! এর মূল বর্ণনাকারী ও সঙ্কলক হলেন আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহিমাহুল্লাহ)-এর ছেলে আবদুল্লাহ! গ্রন্থটিতে বুখারি, মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযি, নাসাঈ ও ইবনু মাজাহ সহ পরিচিত কোনো হাদীস-গ্রন্থের উদ্ধৃতি না থাকায় কেউ কেউ অবাক হতে পারেন! কিন্তু বাস্তবতা হলো—উপরোল্লিখিত সকল হাদীস-গ্রন্থই রচিত হয়েছে আহমাদ ইবনু হাম্বালের পর! এদের মধ্যে ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম ও ইমাম আবূ দাউদ ছিলেন তাঁর ছাত্র।

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল নিজেই হাদীসশাস্ত্রের একজন প্রথম সারির মুজতাহিদ ইমাম ও প্রামাণ্য বিশেষজ্ঞ! তাঁর আল-মুসনাদ গ্রন্থটির ন্যায় আয-যুহদ গ্রন্থটি ও তিনি নিজের সূত্রে বর্ণনা করেছেন! তবে এ অনুবাদে কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় পূর্ণাঙ্গ সনদ বা বর্ণনা-পরম্পরা উল্লেখ না করে কেবল সর্বশেষ বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রায় সাড়ে এগারো শত বছর পূর্বে এই মহামূল্যবান গ্রন্থ রচিত হলেও আমাদের জানামতে ইংরেজি, উর্দু কিংবা অন্য কোনো ভাষায় অদ্যাবধি এর কোনো অনুবাদ প্রকাশিত হয়নি! এদিক থেকে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের হাতে এ অনুবাদ গ্রন্থটি তুলে দিতে পেরে আল্লাহ তাআলার দরবারে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

গ্রন্থটির অনুবাদ নির্ভুল রাখার জন্য আমরা সাধ্য মোতাবেক চেষ্টা করেছি। তারপরও কোনো সুহৃদ বোদ্ধা পাঠকের চোখে যে-কোনো ভুল ধরা পড়লে, আমাদের অবহিত করার বিনীত অনুরোধ রইলো।

পরিশেষে, আল্লাহ তাআলা’র নিকট আমাদের প্রার্থনা—তিনি যেন আমাদেরকে দুনিয়াতে সেভাবে জীবনযাপনের সামর্থ্য দেন! যেভাবে তিনি তাঁর নবি-রাসূলদের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দিতে চেয়েছেন। আমীন!

Rate the Post

Categories

Writers

Popular Books

Scroll to Top